পাহাড়ে ভোটের পরিকল্পনা মমতার, বেসামাল বিজেপি

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে সর্বশেষ বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে হারা বাজিকে, এবার ভোট দিয়েই নিজের দিকে টেনে আনতে ‘মাস্টার স্ট্রোক’ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দার্জিলিং পাহাড়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, পৌরভোট, জিটিএ নির্বাচন রাজ্য সরকার করতে আগ্রহী জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গ জেতার স্বপ্ন বিফলে যাওয়ায় এমনিতেই ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির। তারওপর ভোটের পর থেকে দক্ষিণবঙ্গের মতোই উত্তরবঙ্গে শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় দেখা দিয়েছে ভাটার টান। এরই মধ্যে মমতার এই আচমকা ঘোষণায় কিছুটা হলেও বেসামাল বিজেপি।

বিধানসভা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরেও যদি তৃণমূলের কোথাও দূর্বলতা থাকে তা হলো উত্তরবঙ্গ। বঞ্চনার কথা বলে বাংলা থেকে উত্তরবঙ্গকে ভাগ করে আলাদা রাজ্যের দাবিও ইতোমধ্যে তুলছেন বিজেপির একাংশ সাংসদ-বিধায়করা। সেখানে পাল্টা দাওয়াই দিতে মমতা বারবার ছুটে যাচ্ছেন। উন্নয়নের ছোঁয়া ছড়িয়ে দিতে এবার নবান্নর পাশাপাশি তিনি শিলিগুড়ির উত্তরকন্যাকে সক্রিয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন যাতে গেরুয়া শিবির উত্তরবঙ্গের রাজনীতি আর কোনোভাবেই ওয়াকওভার না পায়। ভোটে জেতার পর তাই প্রশাসনিকভাবেই রাজনৈতিক দাবিগুলোকে মেটাতে চান মমতা।

সম্প্রতি পাহাড়ে বিজেপির সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকা কয়েকটি দলকে নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দফতরে দরবার করে এসেছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিসতা। ফের আলদা রাজ্যের দাবি উঠবে এই আশঙ্কা করেই মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিনের দার্জিলিং সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান বের করতে চাইছেন। অনেক আগেই তিনি পাহাড়ের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠিগুলোর উন্নয়নের জন্য আলাদা বোর্ড গড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু জিটিএকে কেন্দ্র করে জনমুক্তি মোর্চার বিভাজন দার্জিলিংকে ফের অশান্ত করে তোলে। বিমল গুরংরা বিজেপি পক্ষে চলে যান।

অপরদিকে, বিনয় তামাং গোষ্ঠি তৃণমূলের পক্ষে থাকে। জনমুক্তির মোর্চার এই বিভাজনের সুযোগ নিয়ে বিমলকে নিজের দিকে টেনে এসে দার্জিলিং লোকসভা আসন জিতে যায় বিজেপি। বিমলের মোহভঙ্গ হলে বিধানসভার ভোটে তিনি তৃণমূলের পক্ষে ভিড়লেও ততদিনে পাহাড়ে শক্তিশালী অবস্থান পাকা করে নেয় বিজেপি।

এমতবস্থায় তৃণমূল নয়, রাজ্য সরকার সত্যিই যে উত্তরবঙ্গসহ পাহাড়ে উন্নয়ন চায়- তা প্রমাণে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা। এরমধ্য দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ দিয়ে পাহাড়ে রাজনীতি ফের শক্তভাবেই পা ফেলতে চাইছে তৃণমূল। আর ঠিক এই কারণেই দীর্ঘদিন না হওয়া জিটিএ ও পঞ্চায়েত এবং পৌরভোটের পরিকল্পনা এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ বিধানসভা ভোটের ফলাফলের বিচারে উত্তরবঙ্গের ২২ টি পৌরসভা ও শিলিগুড়ি করপোরেশনে বিজেপি ২০টিতে এগিয়ে রয়েছে। শুধু কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ১১৬ ভোটে ও উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা ১৬৬৫ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। পাহাড়ের মিরিক পৌরসভা ৫৯৩ এবং মাল পৌরসভায় ৬০৭ ভোটে বিজেপি এগিয়ে।

কিন্তু বিধানসভা ভোটের পর যেভাবে বিজেপি ছেড়ে সাংসদ-বিধায়ক-নেতা-কর্মীরা চলে যাচ্ছেন তাতে এই পরিসংখ্যানে বদল আসাটাই স্বাভাবিক। তবে বিজেপিও যে ফাঁকা মাঠ ছাড়বে না তা বিলক্ষণ জানে তৃণমূল। তাই প্রশাসনিক উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে তারা ভোটে প্রত্যাঘাত করতে চাইছে। এই সময় ভোট করলে তৃণমূলের বাড়তি সুবিধা থাকবে, তা কিন্তু এক প্রকার মেনে নিচ্ছে বিজেপি।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘তৃণমূল দখলদারি সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। ফলে, যখন ভোট করলে তৃণমূলের সুবিধা তখন তারা ভোট আয়োজন করে।’