ত্রিপুরায় মতুয়াদের ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি, থাবা বসাচ্ছে তৃণমূল

ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটের দেরি থাকলেও উত্তাপ ছড়িয়েছে পৌরসভা ভোট ঘিরে। ধারে-ভারে প্রধানবিরোধী বামফ্রন্টকে সরিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আপাতত সম্মুখ সমরে তৃণমূল। ত্রিপুরায় বাঙালি-উপজাতি ভোটাররা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মতো এবার সবার নজর পড়েছে মতুয়া ভোট ব্যাংকে। রাজ্যের মতুয়া ভোট এতদিন পর্যন্ত ছিল শাসক দল বিজেপির দখলে। এবার সেই ভোট ব্যাংকে থাবা বসাতে চাইছে তৃণমূল। সর্তক বিজেপির মরিয়া প্রচেষ্ঠা এখন মতুয়াদের নিজেদের দিকে ধরে রাখা।

জানা যাচ্ছে, ত্রিপুরার মোট ভোটারের মধ্যে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ এসি। আর এর মধ্যে অধিকাংশই মতুয়া। রাজ্যে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এই ভোট এখন কার দখলে থাকবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।

ইতোমধ্যে তৃণমূলের সহযোগী সংগঠন নমশূদ্রঃ বিকাশ পরিষদের পক্ষ থেকে ত্রিপুরায় গিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। আর সেটা টের পেয়েই বিজেপি তরফে মতুয়াদের সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ভারতের মন্ত্রী তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর গত সপ্তাহে আগরতলা থেকে ঘুরে এসেছেন।

নমশূদ্রঃ বিকাশ পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগ্যের দাবি, ত্রিপুরায় বিপ্লব দেব সরকার মতুয়াদের আস্থা হারিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আগরতলায় আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেত্রী অপর্ণা বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিজেপি। আগরাতলা পৌরসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার জন্য তার ওপর হামলা হলো। এটা তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষরা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। এর প্রভাব ভোটে পড়বেই। এবার বিজেপি তফশিলি সমাজের এক শতাংশও ভোট পাবে না।’

মুকলবাবু আরও বলেন, ‘শান্তনু ঠাকুর যতই ত্রিপুরা যান না কেন সমর্থন পাবেন না। উনি যে সভা করেছিলেন আগরতলায় সেখানে সেরকম লোক হয়নি।’

অন্যদিকে, মুকুলবাবুর দাবি মানতে চাননি অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘নমশূদ্রঃ বিকাশ পরিষদের এখানে তেমন কোনও প্রভাব নেই। আসলে এখানে সিপিএম তলায় তলায় তৃণমূল হয়েছে।’

প্রকাশবাবুর অভিযোগ, ‘বামেরা চিরকালই আমাদের ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করেছে। ওই আমলে প্রচুর জাল এসটি শংসাপত্র বানিয়ে অনেকেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। আর তারাই সরকার চালিয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্যে সব উন্নয়ন থেকে প্রকৃত তফশিলিরা বঞ্চিত হয়েছে। আমরা এবার সংগঠিত হয়েছি। আমরা শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে আগরতলায় সম্মেলন করেছিলাম। সেখানে জেলাগুলো থেকে ৩০০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। হল উপচে পড়েছে। ১০১ জনের আমাদের রাজ্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

জানা গেছে, রাজ্যে ১০টি তফশিলি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টি আসন মতুয়া অধ্যুষিত। ত্রিপুরার আসন্ন বিধানসভা ভোটে এই ৬টি আসন তেলিয়ামুড়া, অমরপুর, ফটিকরায়, বাপিয়াছড়া, প্রতাপগড় এবং সূর্যমনিগড়ে বিজেপির পক্ষ থেকে মতুয়া প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের ত্রিপুরার নেতারা।