মুখরক্ষা উত্তরে, দক্ষিণে বামদের নিচে বিজেপি

কলকাতার পৌর নির্বাচনে ১৩৪টি ওয়ার্ডে জয় পেয়ে বোর্ড দখল করলো তৃণমূল কংগ্রেস। অপরদিকে মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে বিজেপি। উনিশের লোকসভা ভোটের পর থেকে বাংলাজুড়ে যে গেরুয়া ঝড় উঠেছিল, তা একুশের বিধানসভা ভোটের পর ফের নিন্মচাপে পরিণত হলো।

২০১০ সালে কলকাতা পৌর নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্তি ছিল মাত্র তিনটি আসন। ১১ বছর ফের সেই তিনে এসে ঠেকলো দলটি। ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলে উত্তরে কিছুটা মুখরক্ষা হলেও দক্ষিণে অধিকাংশ স্থানে বামেদের নিচে থেকে লড়াই শেষ করেছে গেরুয়া শিবির।

উনিশের লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন জেতার পর থেকে গেরুয়া শিবিরের প্রত্যাশার পারদ চড়তে থাকে। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে বামে-কংগ্রেসকে সরিয়ে তারা বিরোধী হিসাবে বাংলার রাজনীতিতে উঠে আসে। ফলত, একুশের ভোটে তারা তৃণমূলকে সরিয়ে বাংলা মসনদ দখলের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠে। কিন্তু সে আশা শেষ পর্যন্ত পূর্ণ না হলেও বাম-কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারণে এককভাবে বিরোধী দলের মর্যাদা পায় বিজেপি। পরবর্তী উপনির্বাচগুলোতে অবশ্য বিজেপির কাছ থেকে দিনহাটা ও শান্তিপুর আসন ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। এই উপনির্বাচনগুলো থেকে বিজেপির ভোটের হার কমতে থাকে। অপরদিকে, প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়া বামদের ভোটের হার কিছুটা বাড়ে। ফের একই ঘটনা ঘটলো কলকাতা পৌর নির্বাচনে। বিজেপি থেকে একটি আসন কম পেয়েও শতাংশ হারে এগিয়ে বামেরা। নির্বাচন কমিশনের হিসাব বলছে, বিজেপি পেয়েছে ৯.২১ শতাংশ ভোট। আর বামেরা পেয়েছে ১১.৮৯ শতাংশ ভোট।

বিজেপি ২০১০ সালে পেয়েছিল তিনটি ওয়ার্ড। ২০১৫-তে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাতে। উনিশের লোকসভা ভোটের নিরিখে বিজেপি কলকাতায় এগিয়ে ছিল ২২ ওয়ার্ডে। একুশের বিধানসভা ভোটে এসে তা দাঁড়ায় ১২। পরে ভবানীপুর উপনির্বাচনে দুইটি ওয়ার্ড হাতছাড়া হয় বিজেপির। ২০১৫ সালে পাওয়া ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবারও বিজেপির পক্ষে গেলেও হাতছাড়া হয়েছে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড। সজল ঘোষের হাত ধরে নতুন করে এসেছে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডটি।

শতাংশের হারেও ভোট কমেছে বিজেপির। ২০১৫-তে বিজেপি পেয়েছিল ১৫.৪২ শতাংশ। এবার তা ৬.২১ শতাংশ কমে গিয়ে হয়েছে ৯.২১।

ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলে দ্বিতীয় স্থানের ক্ষেত্রেও বামেদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে বিজেপি। বামেরা যেখানে ৬৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় হয়েছে, সেখানে বিজেপি মাত্র ৪৮টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের পেছনে রয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে রাকেশ ভার্মা। তার প্রাপ্ত ভোট মাত্র ১৪৯। যা শতাংশ হারে ১.২১। দক্ষিণ কলকাতার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডটি নিয়ে বিজেপির মধ্যে চরম বির্তক দেখা দিয়েছিল প্রাক্তন বিজেপি কাউন্সিলর প্রয়াত তিস্তা দাস বিশ্বাসের স্বামী গৌরব বিশ্বাসকে প্রার্থী না করা নিয়ে। গৌরব নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে হারলেও এখানে তিনি বিজেপি প্রার্থীকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে নিজে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। গৌরব পেয়েছেন ১৫০০ ভোট। অপরদিকে বিজেপি প্রার্থী রাজর্ষী লাহিড়ি পেয়েছেন মাত্র ৯৭৩ ভোট।

কলকাতা পৌর নির্বাচনে বামেদের এই ফলের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি এদিন বলেছেন, বামেরা বিধানসভা ভোটের সময় বলেছিলেন, ‘নো ভোট ফর বিজেপি।’ নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করেছিল। তার প্রতিদান হিসেবেই কয়েকটা আসন পাইয়ে দিয়েছে তৃণমূল। আমাদের কাছে খবর ছিল, যেসব বুথে ছাপ্পা হয়েছে, সেখানে তিন ভোট তৃণমূলে পড়লে দুইটি পড়েছে সিপিএমে।’