রাষ্ট্রবোধ জাগাতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ‘হর ঘর তেরঙ্গা’

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে এবার ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিলো পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। এ উপলক্ষে ভারতজুড়ে অমৃত মহোৎসবের ঘোষণা ইতোমধ্যে করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই পরিকল্পনার অর্ন্তগত ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রবোধ জাগ্রত করার লক্ষে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ব্যাপক জনসংযোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন মুরলিধর সেন লেনের কর্তারা। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট আর চব্বিশের লোকসভার আগে এ ধরণের গৃহ সর্ম্পক অভিযান গেরুয়া শিবিরকে বাড়তি অক্সিজেন দেবেই বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

যদিও এই কর্মসূচিটি কেন্দ্র সরকারের। কর্মসূচিটি সফল করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই নিয়ে টুইটও করেন তিনি। তাতে তিনি বলেন, “নাগরিকের মনে দেশভক্তির ভাবনা প্রবল করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ কর্মসূচির আওতায় বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করেছেন।”  

২২ জুলাই থেকে সব সরকারি ওয়েবসাইটের অগ্রভাগে তেরঙ্গার ছবি রাখতে বলা হয়েছে। নাগরিকদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারেও তেরঙ্গার ছবি তুলে ধরতে উৎসাহিত করার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সরকারিভাবে এর বাস্তবায়ন কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই বঙ্গ বিজেপিই উদ্যোগ নিয়েছে এই কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করার। 

জানা গেছে, ইতোমধ্যে গত ১৬ জুলাই জরুরি বৈঠক করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী কিষান রেড্ডিও। ওই বৈঠকে সব রাজ্য, জেলা এবং মণ্ডলস্তরের বিজেপি সভাপতিদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য চলতি সপ্তাহে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালব্য এবং রাজ্যের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। সাধারণ মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচিতে যোগদানে আগ্রহী করে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। অমিত শাহ খোদ এর প্রস্তুতির পর্যালোচনা করে দেখেছেন। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের অধীনেই চালানো হবে এই কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দেশের সরকারি ভবনসহ ২০ কোটি বাড়ির মাথায় জাতীয় পতাকা ওড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারি ভবন, রাষ্ট্রায়াত্ত দফতর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, টোলপ্লাজা, থানায় জাতীয় পতাকা তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।  আগস্ট মাসে তিন দিন ধরে ঘরে ঘরে পতাকা ওড়ানো হবে। 

বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, এই উপলক্ষে স্বাধীনতার দিন রাজ্যজুড়ে সর্বত্র বাইক র‌্যালি, প্রভাত ফেরি বের করবেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। এই র‌্যালিগুলোতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে ‘রামধুন’ ও ‘বন্দেমাতরম’ গান বাজানো হবে। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে রাজ্যের বাড়ি বাড়ি জাতীয় পতাকা বিলি করবেন গেরুয়া কর্মীরা। প্রতিটি ধর্মীয় স্থান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ভবনেও তারা জাতীয় পতাকা নিয়ে যাবেন বিলি করতে। সবাইকে অনুরোধ করা হবে যাতে, ওই তিন দিন জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে। এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে পদার্পণ করছি, আসুন এই স্বাধীনতা দিবসে আমরা আমাদের জাতীয় পতাকাকে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত গর্বের সঙ্গে নিজেদের বাড়ি থেকে উত্তোলন করি।’

রাজনৈতিক মহলের মতে, এই কর্মসুচি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হলেও আদতে তা পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবিরকে মাইলেজ দিতে পারে। কারণ এই সরকারি কর্মসূচিকে পালনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রবাদী চিন্তা জাগিয়ে তুলে, ব্যাপক অংশের ভোটারকে নিজেদের দিকে টানতে, আসন্ন পঞ্চায়েত ও চব্বিশের লোকসভার আগাম প্রচার সেরে রাখার চেষ্টা হাতছাড়া করতে চাইছেন না মুরলিধর সেন লেনের কর্তারা।