ভারতে গ্রেফতার আল কায়েদা জঙ্গি, ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় জড়িত বলে সন্দেহ

ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে আল কায়েদার সন্দেহভাজন সদস্য হাসনাত শেখ কলকাতা পুলিশের এসটিএফের জালে ধরা পড়েছে। সন্দেহভাজন আল কায়দা সদস্যের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মালদার সুজাপুরে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সন্দেহ করা হচ্ছে বাংলাদেশের ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় জড়িত এই হাসনাত।

গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের খুনের পেছনে রয়েছে আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত হাসনাত শেখকে চিহ্নিত করা হয়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ-খবর করতে তদন্তকারীরা সুজাপুরে যান। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত জানতে পারা যায় হাসনাত সেখান থেকে পালিয়ে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে আশ্রয় নিয়েছে। ওই খবর পাওয়ার পরই সাহারানপুরে হাসনাতের ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ইতোমধ্যে তাকে তাকে কলকাতায় আনাও হয়েছে।

এদিকে এই খবর পাওয়ার পরই সুজাপুর গ্রামে আতঙ্ক। গ্রামে থমথমে পরিবেশ। হাসনাতের মা জানান, তার ছেলে সাহারানপুরে মৌলবি হওয়ার শিক্ষা নিতে সেখানকার মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল।

এই যুবকের ছোটবেলা কাটে স্থানীয় গ্রামে। স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া করার পর সে বর্ধমানের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। এরপরে যায় উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে।

তার ভাই আব্দুল কাইয়ুম জানান, পরিবারে একমাত্র হাসনাতই লেখাপড়া করত। তার বাবা পেশায় সবজি ব্যবসায়ী। তারা পাঁচ ভাই ও বোন। তিন ভাই শ্রমিকের কাজ করে আর এই যুবকই লেখাপড়া করত। তবে সে আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে তার টের পায়নি গ্রামবাসী থেকে পরিবারের সদস্যরা, এমনটাই দাবি তাদের। 

প্রতিবেশীরা জানান, প্রতিবছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার আগে সে উত্তর প্রদেশ থেকে বাড়িতে আসত। অন্য কোনও বিষয়ে তার মনোযোগ ছিল না। ধর্মীয় শিক্ষা নিয়েই থাকতো, এমনকি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আরিফ আলিও হতবাক। ঘটনায় সবাই নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।

উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, এর আগেও দেখা গেছে মালদা জেলার কালিয়াচক থানা এলাকাতে জঙ্গি সংগঠনগুলো সক্রিয় রয়েছে। এর আগেও লিঙ্কম্যান ধরা পড়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের। এবার যে অভিযোগ ওঠেছে তা একটি আন্তর্জাতিক অভিযোগ। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক।

প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ব্লগার অভিজিৎ রায় নৃশংসভাবে জঙ্গি হামলায় নিহত হন। হত্যাকাণ্ডে আল কায়েদার যোগসূত্র পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তদন্ত শুরু হয়। সেই সূত্র জুড়ে গেলো সীমান্তবর্তী মালদায়।

২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ৫ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আর শফিউর রহমান ফরাবীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, বরখাস্তকৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান সাজ্জাদ ওরফে শামস্। মেজর জিয়া এবং আকরাম হোসেন পলাতক রয়েছে।