নিয়োগ দুর্নীতি: চাকরি গেলো মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভাতিজির

পশ্চিমবঙ্গে এবার ভুয়া চাকরির তালিকায় নাম জড়ালো খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের। শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের নির্দেশে ক্লার্কের চাকরি গেলো মুখ্যমন্ত্রীর ভাতিজি বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়ের। এ নিয়ে জেলাজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রভাব খাটিয়ে বৃষ্টিকে ওই চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

নবম-দশম এবং গ্রুপ ডি’র পর এবার হাইকোর্টের নজরে গ্রুপ সি। ওই পদের চাকরিতে ওএমআর সিটে ৯০ শতাংশ কারচুপি করা হয়েছে বলে হাইকোর্ট জানতে পেরেছে। ইতোমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের গ্রুপ সি পদে গরমিলের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। ওই তালিকায় নাম রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজির। শুক্রবার হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গেলো তারও।

জানা গেছে, গ্রুপ সি পদে মোট ৩ হাজার ৪৭৭ জনের ওএমআর সিট নতুন করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ১১৫ জনের ওএমআর সিটে গরমিল রয়েছে। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ ওএমআর সিটে গোলমাল রয়েছে। আদালতের নির্দেশেই ৩ হাজার ১১৫ জনের নাম বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। ওই তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজি বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে ৬০৮ নম্বরে। এরপর শুক্রবার গ্রুপ সি পদে কর্মরত ৭৮৫ জনের চাকরি বাতিল করেছে হাইকোর্ট। ওই তালিকার ১৫৫ নম্বরে নাম রয়েছে বৃষ্টির।

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি বীরভূমের রামপুরহাট ১ নম্বর বল্কের কুসুম্বা গ্রামে। ওই গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতি বিজড়িত ঘর এখনও রয়েছে। ছোটবেলা মুখ্যমন্ত্রী কুসুম্বা গ্রামেই কাটিয়েছেন। তাইতো আজও বীরভূমে এলে মুখ্যমন্ত্রী ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করেন। মাঝে মধ্যেই মামার বাড়ি গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মামা অনিল মুখোপাধ্যায়ের ছেলে নীহার মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে বৃষ্টি। নীহার বর্তমানে বীরভূম জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ। ফলে বিরোধীদের অভিযোগ প্রভাব খাটিয়ে বৃষ্টির চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বৃষ্টিকে।

যদিও নীহার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মেয়ে কীভাবে চাকরি পেয়েছিল বলতে পারবো না। মেয়ে আবেদন করেছিল। পড়াশোনায় ভালো ছিল। কিন্তু কীভাবে চাকরি পেলো জানি না। তবে চাকরি তো করেনি। ইস্তফা দিয়েছিল। কারণ মেয়ে পড়ে গিয়ে মানসিক রোগী হয়ে গেছে। এখন কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

বোলপুর হাইস্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক আচার্য বলেন, ‘নিয়মিত স্কুলে আসতেন না। দু-তিন দিন স্কুলে এসেছেন। কোনও কাজ করতেন না। স্কুলে এসে বসে থাকতের। কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলতেন না। দেখে অস্বাভাবিক লাগত। তারপর হঠাৎ ইস্তফা না দিয়ে চলে যান। কোথায় গেছেন জানি না।’

বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘এতদিন চাকরি চুরিতে শাসক দলের নেতাদের নাম জড়িয়েছিল। এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের নাম জড়ালো। এরপরও মুখ্যমন্ত্রী বলবেন তিনি সৎ। তার দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ নিজের বাড়িতেই ঘুঘুর বাসা। প্রভাব খাটিয়ে ভাতিজিকে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।’