দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের আরও এক মন্ত্রী গ্রেফতার

রেশন বণ্টন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হলো পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সল্টলেক বিসি ২৪৪ ও ২৪৫ নম্বর বাড়িতে দীর্ঘ তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। জিজ্ঞাসাবাদের প্রায় ২১ ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে সল্টলেকের বাড়ি থেকে আনা হয় সিজিওতে। তবে ইডির নজরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আরও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ।

ইডি সূত্রের খবর, রেশন দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ম্যারাথন তল্লাশি চালানোর পরও তাকে গ্রেফতার করার কোনও সিদ্ধান্ত নেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। রাত ১২টা পর্যন্তও তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, মন্ত্রীর বাড়ির সমান্তরালে তল্লাশি চলছিল তার আপ্তসহায়ক অমিত দে’র বাড়িতেও। মধ্যরাতে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কর্মকর্তারা।

সূত্রের খবর, অমিত দে-কে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় বেশ কিছু তথ্য জানতে পারেন ইডি অফিসাররা। সেই তথ্য খতিয়ে দেখার জন্য রাত ১২ টার পর নতুন করে প্রশ্ন পর্ব শুরু হয় মন্ত্রীর বাড়িতে।

জানা গেছে, সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বেজায় আপত্তি ছিল জ্যোতিপ্রিয়র। তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও সামনে আসে। এরপর ইডি কর্মকর্তারা পুরো বিষয় জানান দিল্লিতে সংস্থার সদর দফতরে। তারপরই মন্ত্রীকে গ্রেফতার করার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়।

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগও রয়েছে। ২০১২ সালে পিএসসির সদস্য হন জ্যোতিপ্রিয়র দাদা দেবপ্রিয়। সরকারি কর্মী না হয়েও কীভাবে পিএসসিতে দেবপ্রিয়, প্রশ্ন ওঠে। ২০১৮ সালে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষায় নম্বর শূন্য থেকে বেড়ে হয় ১৬২। জ্যোতিপ্রিয়র ভাই দেবপ্রিয় তখন পিএসসির সদস্য। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়। কিন্তু মামলা দায়ের হলেও তদন্ত হয়নি।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের হলফনামায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছিলেন, তার স্ত্রীর হাতে নগদ ৪৫ হাজার রুপি রয়েছে। তার এক বছরের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি রুপি তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। বালুর স্ত্রী ও কন্যার নামে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে মোট ৯ কোটি ৮২ লাখ রুপি জমা পড়েছিল বলেও ইডি সূত্রে খবর।

শুক্রবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডি গ্রেফতার করে। তার আগে রেশন ডিলার বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তাকে জেরা করেই বালু সম্পর্কে একাধিক তথ্য উঠে আসে বলে সূত্রের খবর। ইডি সূত্রে জানা গেছে, বাকিবুরের বয়ানেই বিপদ বাড়ে বালুর।

ইডি সূত্রে খবর, বাকিবুর জেরায় দাবি করেছেন, ১২ কোটি রুপির ৩টি কোম্পানি কিনতে বলেছিলেন বালু। লোন হিসেবে অর্থ জোগাড় করেছিলেন বাকিবুর। কিন্তু সেই অর্থ বালু ফেরত দেননি।

আদালতে শুনানি চলাকালীন বিচারক বলেন, ‘আমার অবাক লাগছে যে হলফনামায় হাতে ৪৫ হাজার রুপি অথচ এক বছরে ৬ কোটি!’

এদিন আদালতে বিচারপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ১০ দিনের ইডি হেফাজতে পাঠিয়েছেন।