বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমার ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। কারণ আমি জোরালোভাবে বাঙালি পরিচয়কে ধারণ করি।’ সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিজের বন্ধু উল্লেখ করে অমর্ত্য সেন বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন, কিন্তু অচলাবস্থা নিরসনে তাকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের শান্তিনিকেতনে নিজের বাসভবনে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অমর্ত্য সেন। রবিবার (২ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থানের কথা তুলে ধরে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমি ঢাকায় অনেক সময় কাটিয়েছি এবং সেখানে আমার স্কুলের শিক্ষা শুরু করেছিলাম। ঢাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জে আমার পৈতৃক বাড়িতে প্রায়ই গিয়েছি। মায়ের দিক থেকে আমি নিয়মিত বিক্রমপুরে, বিশেষ করে সোনারাঙে গিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এসব জায়গার খুব গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ তার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা নিয়ে অন্য অনেকের মতো আমি উদ্বিগ্ন।’
ঢাকায় শৈশব কাটানো অমর্ত্য সেনের স্কুলশিক্ষা শুরু হয়েছিল সেন্ট গ্রেগরী স্কুলে। পরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন।
অমর্ত্য সেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন সেনাশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করায়, যেমনটি অনেক দেশে ঘটেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার কথা বলেছেন তিনি। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তাহলে অন্য দলগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছে, সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
এসময় বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গও উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমি মনে করি, কোনও একটি গোষ্ঠীকে একপাশে ঠেলে না দিয়ে বাংলাদেশের উচিত, সবাই একসঙ্গে কাজ করার যে ঐতিহ্য এই দেশের রয়েছে; তার সর্বোত্তম ব্যবহার করা। একটি উদারপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। আমি আশা করি যে, স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদের প্রতি বাঙালি সম্প্রদায়ের যে অঙ্গীকার রয়েছে, সেটা টিকে থাকবে। আমি আশা করি, বাংলাদেশে আগে নির্বাচন যেমন হতো বলে অনেকে দাবি করেন, তার চেয়ে আগামীর নির্বাচন দৃশ্যত বেশি অবাধ হবে। আমি বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আমি আশাহীন নই।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ইউনূস একজন পুরোনো বন্ধু। আমি জানি, তিনি খুবই সামর্থ্যবান ব্যক্তি এবং অনেক দিক দিয়ে একজন উল্লেখযোগ্য মানুষ। তিনি বাংলাদেশের সেকুলারিজম ও গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন আরও বলেন, ‘আপনি যদি হঠাৎ করে একটি দেশের প্রধান হন, যেমনটি ইউনূসের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিষয় বিবেচনা করতে হবে। সেখানে বিভিন্ন ইসলাপন্থী দল রয়েছে, এখন হিন্দুদেরও বিভিন্ন পক্ষ রয়েছে। ইউনূসের সামর্থ্যের ওপর আমার অনেক আস্থা রয়েছে।’