সৌদি আরবে কান্নার ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করায় গ্রেফতার ভারতীয় চালক

সৌদি আরবে কর্মরত ভারতীয় ট্রাকচালক আব্দুল সাত্তার মাকান্দারসৌদি আরবে ট্রাক চালক হিসেবে কাজ করছেন ভারতীয় নাগরিক আব্দুল সাত্তার মাকান্দার। সৌদি কোম্পানি আল সুরুর ইউনাইটেড গ্রুপে কাজ করছেন তিনি। কাজ শুরু করার পর থেকেই দুর্দশা তার সঙ্গী। যে মজুরি দেওয়ার কথা তা দিচ্ছে না কোম্পানি, এমনকি তাকে দেশেও ফিরতে দিচ্ছে না। উপায় না দেখে ১২ মার্চ একজন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টের ফেসবুক পেজ এ সাহায্যের আবেদন জানিয়ে একটি কান্নামিশ্রিত ভিডিও পোস্ট করেন। কান্নার ওই ভিডিও প্রকাশের পর তার দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। সৌদি সরকার ভিডিওটি প্রকাশের অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।
সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট কুন্দন শ্রিবাস্তব ভিডিওটি তার ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছিলেন। ১৪ মার্চ মাকান্দারকে সৌদি পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর শ্রিবাস্তব ভিডিওটি ডিলেট করে ফেলেন। ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর আইনে মাকান্দারকে গ্রেফতার করা হয়।
দ্য হিন্দুকে শ্রিবাস্তব বলেন, যেদিন মাকান্দারকে গ্রেফতার করা হয় সেদিনই তার নিয়োগকর্তা ই-মেইলে ভিডিওটি মুছে ফেলার দাবি জানান। নিয়োগকর্তা আরেকটি নতুন ভিডিও পোস্ট করতে বলেন যাতে বলা হবে কোম্পানির আচরণ মাকান্দারের প্রতি অত্যন্ত ভাল এবং কোম্পানিই তাকে বাঁচিয়েছে। আমরা মাকান্দারের দাবিগুলো নিয়োগকর্তাকে জানিয়েছি। আশা করছি তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তিনি ভারত ফিরতে পারবেন শিগগিরই।

শ্রিবাস্তব মাকান্দারের পরিবার, স্ত্রী ও চার সন্তানের সঙ্গে দেখা করেছেন। পরিবারের সদস্যরা মাকান্দারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চেয়েছেন।

ফেসবুকে শেয়ার করা ভিডিওতে নিজের দুর্দশা বর্ণনা করেন ৩৫ বছরের মাকান্দার। কথা বলার সময় চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল। তার এ আকুল আবেদনটি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মনে দাগ কেটে যায়। শেয়ার হতে থাকে একের পর এক। ভিডিওতে মাকান্দার বলেন, ‘২৩ মাস ধরে সৌদি আরবে আছি আমি। ৫ মাস আগে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করি। কিন্তু নিয়োগ কর্তা আমাকে দেশে যেতে দিচ্ছেন না... নিয়োগকর্তা আমাকে উপযুক্ত মজুরিও দেন না। এমনকি খাবারের জন্যও কোন টাকা-পয়সা দেন না।’

ভিডিও:

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মাকান্দারকে মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও শুক্রবার সকালে ফের তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাকান্দারের এক বন্ধু আকিফ শেখ বলেন, ‘খোবার শহরে বসবাসরত আমাদের বন্ধুরা জানিয়েছে মাকান্দারকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছে। এবারের অভিযোগটি এখনও জানা যায়নি।’

মাকান্দারের নিয়োগকর্তা আল সুরুর ইউনাইটেড গ্রুপ ভিডিওতে যা বলা হয়েছে তা অস্বীকার করেছে। বিবিসিকে তারা জানায়, চুক্তি অনুযায়ী দুই বছর পর মাকান্দার দেশে ফিরতে পারবেন। চুক্তি শেষ হতে এখনও ছয় সপ্তাহ বাকি আছে। কর্তৃপক্ষ দাবি করে, নিয়মিত মজুরি দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে বোনাসও দেওয়া হয়। মাকান্দার চাইলেই যেকোনও সময় চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। 

এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবের এক নিয়োগ কর্তা ভারতীয় এক গৃহকর্মী হাত কেটে ফেলার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিষয়টি নিয়ে সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

২০১৪ সালে সৌদি আরব নতুন চুক্তি করে ভারতের সঙ্গে। এতে ন্যুনতম মজুরি ও সাপ্তাহিক ছুটির বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে মাইগ্রেন্টস রাইটস ডট ওআরজির সহযোগী সম্পাদক ও উপদেষ্টা বানি সরস্বতী দাবি করেন, চুক্তিতে চাকরি পরিবর্তন, ন্যূনতম কর্মঘণ্টা, যোগাযোগের অধিকারের মতো মানবাধিকারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

 

/এএ/বিএ/