ভারতের উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি

nonameসোমবার কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার আস্থা ভোটের সম্মুখীন হওয়ার একদিন আগেই উত্তরাখণ্ডে জারি করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন। উত্তরাখণ্ডের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ‘শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার’ প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশে রবিবার এ নির্দেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মধ্য দিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে বাতিল ঘোষণা করা হলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই অনুসারে, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠায় কেন্দ্রীয় সরকার। সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী, রবিবার রাষ্ট্রপতি শাসনের আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক সাংভি এক টুইটার বার্তায় একে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকারের রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্তটিকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ‘সরকারের সক্ষমতা আছে কি নেই, তা আস্থাভোটেই প্রমাণ করা যেতো। আর এটাই হতো সঠিক পথ।’

উত্তরাখণ্ডের গভর্নর কে কে পালের এক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই কেন্দ্র সরকার রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে। গভর্নরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরাখণ্ডের রাজনৈতিক অবস্থা ‘খুবই ভঙ্গুর’। যে কোনও সময় সহিংসতার ঘটনাও ঘটতে পারে। এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার আসাম থেকে ফিরেই জরুরি বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি। রবিবারও ফের বৈঠকে বসে উত্তরাখণ্ডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শনিবার সকালের দিকে রাজ্য কংগ্রেসের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেন। যাতে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী রাওয়াত তার সরকার বাঁচাতে বিধায়কদের ঘুষ দিচ্ছেন। এর পর থেকেই বিজেপি উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানাতে শুরু করে। তবে হরিশ রাওয়াত ওই ভিডিও ফুটেজের সমালোচনা করে বলেছেন, এটা তার সরকারকে অস্থিতিশীল করার এক ষড়যন্ত্র।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে উত্তরাখণ্ড রাজ্যসভার স্পিকার গোবিন্দ সিং কুঞ্জল ‘বিদ্রোহী’ ৯জন বিধায়ককে ‘দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য’ রাজ্যসভা থেকে বহিষ্কার করেন। স্পিকার রাতে মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

উত্তরাখণ্ডের রাজনৈতিক সংকট নতুন মোড় নেয় চলতি মাসের ১৮ তারিখ। ওই দিন ‘বিদ্রোহী’ নেতা সাকেত বহুগুণাকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় কংগ্রেস থেকে। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণার ছেলে সাকেত বহুগুণাই রাজ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নয় বিক্ষুব্ধ বিধায়কের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ৭০ আসনের উত্তরাখণ্ড রাজ্যসভায় কংগ্রেস সরকারের হাতে ছিল ৩৮ জন বিধায়ক। প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক জোটের আরও ছয় জন বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের সরকারকে সমর্থন করছেন। কিন্তু চলতি মাসের প্রথমদিকে ৯জন কংগ্রেস বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান। এর ফলে বিজেপির ২৮ জন বিধায়কের সঙ্গে মিলে রাজ্যের বিরোধী দলের শক্তি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭-এ। এর পরই রাওয়াত সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

শনিবার ওই ৯ বিধায়ককে রাজ্যসভা থেকে বহিষ্কার করার ফলে এখন রাজ্যসভার আকার ৭০ আসন থেকে ৬১ আসনে নেমে আসে। আর এখন রাওয়াত সরকারের হাতে রয়েছে প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক জোটের ৬ বিধায়ক এবং ২৭ কংগ্রেস বিধায়কের সমর্থন। অর্থাৎ ৬১ আসনের মধ্যে ৩৩ আসনের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আস্থা ভোটের সম্মুখীন হতে তৈরি রয়েছেন বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত।

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত দাবি করেন, তাকে উৎখাত করতে জলের মতো টাকা খরচ করছে বিজেপি। কেন্দ্র সরকার নিজের ক্ষমতার জোরে ছোট রাজ্যগুলির স্বপ্নভঙ্গ করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রাহুল গান্ধীও বিজেপিকে দোষারোপ করেন চলমান সংকটের জন্য। তিনি বলেন, ‘টাকা আর গায়ের জোরে নির্বাচিত সরকারকে অস্থির করে তোলাই এখন বিজেপির নতুন মডেল।’ তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, ‘আমরা নই, কংগ্রেসের মধ্যেই গভীর ফাটল রয়েছে।’ সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি। 

/এসএ/এএ/