সন্ত্রাস দমনে রিও ডি জেনেরিওতে সেনা মোতায়েন

সন্ত্রাস দমনে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরে সেনা মোতায়েন করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির মুখে প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমার এক ডিক্রি জারি করে সেখানে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন। মাদক সম্রাটদের অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন ধরে শহরটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। 
brazil-army

নিরাপত্তা পুনপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্রাজিলের সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য মাদক বাণিজ্যে জড়িত সন্ত্রাসীরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার বিষয়টি স্বীকার নেওয়ার পর সেনা মোতায়ন করা হলো। রিও’র সবচেয়ে বড় বস্তি ফাভেলাসকে ঘিরে এখন কাজ করছেন সেনাসদস্যরা। এর আগে তারা ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করেছে। এবার তাদের কর্তৃত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেনাসদস্যদের পুলিশের চেয়ে বেশি কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ডিক্রিটি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এই অনুমোদন নিশ্চিত করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমার রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্যালেসে শুক্রবার জানিয়েছেন, ‘সংগঠিত অপরাধী চক্র বলতে গেলে প্রায় পুরো শহরকেই গ্রাস করে ফেলেছে। এই সন্ত্রাস পুরো দেশে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে, যা নাগরিকদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এজন্যই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার সন্ত্রাসীদের কড়া জবাব দেবে।’

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নেতৃত্বে থাকবেন সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ওয়াল্টার ব্রাগা। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে পুলিশ। অভিযান এ বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলার কথা।

১৯৬৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসনের অধীনে থাকা ব্রাজিলের এই নাটকীয় সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাউল জুংমান। তিনি বলেন, ‘জারি করা ডিক্রিটি আগের চেয়ে ভালো ও সমন্বিত নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেবে।’

ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড ফ্লিচার বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিও কার্নিভালে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে দ্বিধা ও সমন্বয়ের অভাব প্রেসিডেন্টকে এই ডিক্রি জারির জন্য প্রভাবিত করে থাকতে পারে। কার্নিভালের সময়ে বেশ কয়েকটি ডাকাতি ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল।

ব্রাসিলিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার ত্রিনদাদে এএফপিকে বলেছেন, এই ডিক্রির আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে পুলিশ বাহিনীর দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের চিহ্নিত করা।

ব্রাজিলের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ভিসেন্ট  ডা সিলভা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি পরিস্থিতির উন্নতিতে সাহায্য করবে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। তারা বড় জোর ছোট কিছু গ্রুপকে নিবৃত্ত করতে পারবে।

সমালোচকরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে রয়েছে অন্য উদ্দেশ্য। অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে জরিপে কম ভোট পাওয়া এবং পেনশন আইনে সংস্কার কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়া টেমার এই ডিক্রি জারির মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরাতে চান।