মার্কিন চাপে তেল উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে সৌদি আরব

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে হু হু করে তেল উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে সৌদি আরব। তেলের মূল্য পতনের প্রেক্ষিতে ‘ অর্গানাইজেশন অব পেট্রলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিসের’ (ওপেকে) আসন্ন সভায় তেল উৎপাদন কমানোর প্রস্তাব উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর জামাল খাশোগির হত্যার মতো ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে থাকা সৌদি আরবও চাইছে না যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের তেলের মূল্য নিয়ে নাখোশ করতে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সৌদি আরব বর্তমানে দিনে এক কোটি ১১ লাখ থেকে এক কোটি ১৩ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করছে। তবে নভেম্বর শেষ না হলে বলা যাবে না যে ঠিক কি পরিমাণ তেল আদতে উৎপাদন করছে সৌদি আরব।s3.reutersmedia.net

ইরানের তেল রপ্তানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের যোগান কমে যাবে এবং মূল্য বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা থেকে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু সে পরিকল্পনা হিত বিপরীত হয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইরানি তেল রফতানির ওপর যত কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে তা ঘটেনি। বাজার যেমন আসতে থাকে ইরানি তেল তেমনি আসতে থাকে বর্ধিত হারে উৎপাদিত সৌদি আরবের তেল।

এতে তেলের দাম কমে যায় অনেক; ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলার থেকে কমে হয়েছে ৬০ ডলার। এমন পরিস্থিতিতে ওপেক আগামী মাসে সভা হবে সংস্থাটির। সেখানে মূল্য স্থিতিশীল কারার জন্য তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে চাপে রেখে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই যথেষ্ঠ পরিমাণ তেল উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছে। সৌদি আরবের তেল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, দেশটি চায় তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলারের ওপর থাকুক। সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রী খালিদ ফালিহ বলেছেন, তেলের উৎপাদন যে হারে চলছে তাতে আগামী বছর নাগাদ চাহিদার চেয়ে প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল বেশি তেল উৎপাদিত হবে। যার ফলে ওপেককে হস্তক্ষেপ করতেই হবে।

রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ওপেকের সদস্য নয় এবং তেলের যোগান হ্রাস-বৃদ্ধি ও সেই সঙ্গে মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়ে সরাসরি কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে না সেহেতু যুবরাজকে চাপে রেখে সৌদি আরবের তেল উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন করছে দেশটি। তুরস্কে সাংবাদিক জামালা খাশোগির হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই দেশটির তেল উৎপাদন বিষয়ে প্রধান নীতিনির্ধারক। মার্কিন রাজনীতিবিদদের অনেকের সমালোচনার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। ট্রাম্প নিজে নিজের কৃতিত্ব জাহির করেছেন এই বলে যে তেলের দাম তিনি কমিয়ে রেখেছেন যা মার্কিন অর্থনীতির জন্য একরকম কর মওকুফ সুবিধা। যুবরাজ চান না তেলের মূল্য নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কোনও ঝামেলায় জড়াতে। ফলে তেলের উৎপাদন বাড়ছে ব্যাপক মাত্রায়।