ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় নাশকতার নেপথ্যে ইসরায়েল?

ইরানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে 'অন্তর্ঘাতমূলক' হামলা হয়েছে বলে দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তেহরানের দক্ষিণে নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রটি ওই ঘটনায় বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যায়। এর একদিন আগেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির নতুন যন্ত্রপাতির তথ্য প্রকাশ করেছিল দেশটি। ইরানের আণবিক প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তা আলি আকবর সালেহী অবশ্য এই 'সন্ত্রাসী হামলার' জন্য কাউকে নির্দিষ্ট করে দায়ী করেননি। তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, এটা ইসরায়েলি সাইবার হামলার ফলাফল ছিল।

আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য এ ঘটনার ব্যাপারে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেল আবিবের সতর্কবার্তার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে।

ইরানের এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটলো যখন ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

শনিবার নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে সেন্ট্রিফিউজ সংযোজন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, যা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজে সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে রিঅ্যাক্টর ফুয়েলের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রও তৈরি করা সম্ভব। তবে এই কর্মকাণ্ডকে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির লঙ্ঘন বলে দেখা হচ্ছে। কারণ ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন ও মজুদ করতে পারে।

ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপত্র রেহরোজ কামালভান্দি বলেছেন, রবিবার সকালে পারমাণবিক কেন্দ্রের বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কে একটা ঘটনা ঘটেছে। তিনি যদিও বিস্তারিত জানাননি, তবে ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এতে কোনও হতাহত বা লিকেজের ঘটনা ঘটেনি।

পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংস্থাটির প্রধান আলি আকবর সালেহীর একটি বিবৃতি পাঠ করা হয়। সেখানে তিনি ওই ঘটনাকে 'নাশকতামূলক হামলা' এবং 'পারমাণবিক সন্ত্রাস' বলে বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায়, ‘এই জঘন্য ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে আহ্বান জানাচ্ছে তারা যেন পারমাণবিক সন্ত্রাসের বিষয়টিকে মোকাবিলা করে।’

তিনি বলেন, ‘সব ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার ইরানের রয়েছে।’

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার কথা শুনেছে। তবে এ নিয়ে তারা কোনও মন্তব্য করেনি।

গত বছরের জুলাই মাসেও নাতানজ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাকে অন্তর্ঘাতমূলক হামলা বলে জানিয়েছিল ইরান।

কেন গুরুত্বপূর্ণ নাতানজ?

তেহরান থেকে প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতানজ এলাকা। এখানেই ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সাইট। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে দেখা গেছে, ইরান সম্মত হয়েছিলো যে তারা কম মাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদন করবে যা পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তেল উৎপাদন করবে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গত বছর ইরান এই চুক্তি থেকে সরে আসে। এরপর নাতানজে অ্যাডভান্সড সেন্ট্রিফিউজ দ্বিগুণ করার কথা জানায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। সূত্র: বিবিসি।