ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ তদন্তের দাবি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের দাবি জানিয়েছে। ১৯৮৮ সালে হাজারো রাজনৈতিক বন্দিদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকার জন্য এই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।

শনিবার ইরানের ১৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ড. মোহসেন রেজায়ীর চেয়ে এক কোটি ৫৫ লাখ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

ইরান কখনও এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেনি। রায়িসিও কখনও প্রকাশ্যে তার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেননি। ইরানের কয়েকজন ধর্মীয় নেতা ওই বিচার নিরপেক্ষ ছিল বলে দাবি করেছেন এবং ইসলামি বিপ্লবের শুরুতে সশস্ত্রবিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করায় প্রশংসা করেছেন।

লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার্ড এক বিবৃতিতে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য তদন্তের মুখে না পড়ে ইব্রাহিম রায়িসি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এটি ইরানে যে দায়মুক্তির শাসন চলে সেটির নমুনা।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনসহ রাষ্ট্রের সর্বজনীন এখতিয়ারের আওতায় আমরা অতীতে ও বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার জন্য ইব্রাহিম রায়িসির বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান আমরা জানিয়ে যাব।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচও একই ধরনের কথা বলেছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্যের উপ-প্রধান মাইকেল পেজ বলেন, নিপীড়ন ও পক্ষপাতপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইব্রাহিম রায়িসির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ করে দিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।

মানবাধিকার সংগঠনটির কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরানের নিপীড়ণমূলক বিচার ব্যবস্থার প্রধান হিসেবে দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের কয়েকটি নৃশংস অপরাধের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন রায়িসি। যা দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার বদলে তদন্তের দাবি করে।  

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত ইব্রাহিম রায়িসি ২০১৯ সাল থেকে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আগামী আগস্টে দেশটির ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন তিনি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ায় অনেককেই বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের মতো রক্ষণশীল প্রার্থীও দাঁড়ানোর সুযোগ পাননি। বস্তুত এবারের নির্বাচনে সংস্কারবাদী শিবিরের শক্তিশালী কোনও প্রার্থী ছিল না। ফলে ক্ষমতাসীন পছন্দের প্রার্থী রায়িসি-র বিজয় অনেকটাই অনুমিত ছিল।