মৃতপ্রায় লেক বাঁচাতে ইরানে বিক্ষোভ, গ্রেফতার

একসময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম লবণ পানির লেকটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। লেকটি বাঁচাতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে ইরানের পুলিশ।

ইরানের অভ্যন্তরীণ পর্যটন অবকাশের মূল কেন্দ্র ছিল লেক উরমিয়া। তীব্র খরা, কৃষি আর বাঁধ নির্মাণের কারণে ১৯৯৫ সাল থেকে এটি সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। এখনকার সময়ে হোটেল আর নৌকাগুলো পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। আর পানি কোথাও চোখেই পড়ে না। দুর্গম উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত লেকটি হারিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে স্থানীয়রা।

আঞ্চলিক রাজধানী শহরটির নামও রাখা হয়েছে লেকটির নামে। শনিবার উরমিয়া শহরে বিক্ষোভ করে বেশ কয়েক জন মানুষ। তারা স্লোগান তোলে ‘লেক উরমিয়া মরছে, পার্লামেন্ট এটি খুনের নির্দেশ দিচ্ছে’। আঞ্চলিক পুলিশ প্রধান বিক্ষোভকারীদের শত্রু আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তাদের উদ্দেশ্য জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানো।

তুরস্কের সীমান্তের কাছে উরমিয়া লেকে একসময় ভিড় করতো ইরানি পর্যটকেরা। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এর খনিজ সমৃদ্ধ কাদার বৈশিষ্ট্যগুলো উপভোগ করতে যেতেন তারা।

কিন্তু ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে কৃষি সম্প্রসারণ, নতুন বাঁধ নির্মাণ এবং তীব্র খরার কারণে লেকটির পানির স্তর নামতে শুরু করে।

ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ আলি মির্চি গত বছর বিবিসি ফিউচার প্ল্যানেটকে বলেন, ‘এটা সহজ ধরনের। বাড়তি খরার সঙ্গে মানুষের ব্যবহারের জন্য পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে’। তিনি খরাকে ‘উটের পিঠ ভেঙে ফেলা খড়’ হিসেবে অভিহিত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য লেকটির উপর নির্ভর করতেন। তারা তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে যেতে দেখেছেন। পানির কাছের হোটেল এবং গেস্টহাউসগুলো উপকূল থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে সরে যেতে শুরু করে।

২০ বছরের মধ্যে লেকটি আগের আকারের প্রায় ১০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে যায় আর পানির অবশিষ্ট অংশে লাল শেওলার দাগ ফুটে ওঠে। পর্যটকরা যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং অনেক বাসিন্দা চলে যান। নৌকা এবং ভবনগুলোকে ধীরে ধীরে কেবল জেগে ওঠা লবণের সমভূমিতে ক্ষয়ে যেতে থাকে।

গত কয়েক বছরে ইরানি কর্তৃপক্ষ উরমিয়া লেককে আগের অবস্থায় ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকদের কম পানি প্রয়োজন পড়ে এমন ফসল চাষে প্ররোচিত করার দিকে মনোনিবেশ করেছে তারা।

তবে গত সপ্তাহে আঞ্চলিক গভর্নর স্বীকার করেন সরকারের পদক্ষেপে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়নি আর উরমিয়া লেক বাঁচানো না গেলে পরিবেশগত যে ক্ষতি হবে তা অপূরণীয়।

সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ার পর লেকটির পানির স্তর সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত নাকি সরকারি পদক্ষেপে পানি বাড়ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

গত কয়েক বছর ধরেই ইরান মারাত্মক খরা ও তাপদাহে ভুগছে। আর মানুষের কর্মকাণ্ডে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিল্প যুগের পর্যায় থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। আর কার্বন নিঃসরণ কমানোর পদক্ষেপ না নিলে এই তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি