জীবন দিয়ে ইসরায়েলি নৃশংসতার মূল্য দিলো পাঁচ বছরের শিশু

পাঁচ বছরের ফিলিস্তিনি শিশু আলা কাদ্দুম। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে তাই ঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছিল শিশুটি। গাজা উপত্যকার উত্তরে শুজাইয়া পাড়ায় আবু সামরা মসজিদের পাশে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল। দৃশ্যত সবকিছুই স্বাভাবিক। আসরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল মুসল্লিরা। এর মধ্যেই হুট করে ওই এলাকায় হামলে পড়ে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। শুক্রবার (৫ আগস্ট) যুদ্ধবিমান থেকে চালানো বোমা হামলায় হতাহত হয় অনেকে। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছরের শিশুটিও রয়েছে।

নিজের জীবন দিয়ে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার বাহিনীর নৃশংসতার মূল্য দেয় পাঁচ বছরের আলা কাদ্দুম। নিহত শিশুটির একজন চাচাতো ভাই আবু দিয়াব কাদ্দুম। আল শিফা হাসপাতালের আইসিইউ-র বাইরে অপেক্ষারত ছিল সে, যেখানে আলা কাদ্দুমের বাবা আবদুল্লাহ কাদ্দুমকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আবু দিয়াব কাদ্দুম সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘আলা পাঁচ বছরের একটি নিষ্পাপ শিশু। ভাই ও চাচাতো ভাইদের সঙ্গে রাস্তায় খেলছিল সে। সে এমন কী করেছে যার জন্য তাকে হত্যা করতে হবে?’

আলা কাদ্দুমের বাবা ৩০ বছরের আবদুল্লাহ কাদ্দুমও ওই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দখলদার বাহিনীর সেদিনের হামলায় নিহতদের মধ্যে আলা কাদ্দুমের চাচাতো ভাই, মসজিদের মুয়াজ্জিন ইউসেফ কাদ্দুমও রয়েছেন।

আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সেলমেয়েহের জানান, কপাল, বুক ও ডান পায়ে আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় আলা কাদ্দুম নামের শিশুটি। তার সাত বছর বয়সী ভাই রিয়াদও বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সন্তানদের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন আলা কাদ্দুমের মা। তিনি বলেন, ‘ওরা আমার চোখের আলো।’ আলা কাদ্দুমের রক্তমাখা গোলাপী ও সাদা রঙয়ের জামাটি হাতে নিয়ে তার খালা বলছিলেন, ‘তার রক্ত এখনও শুকায়নি।’

শিশুটির অপরাধ কী ছিল?

নিহত শিশু আলা কাদ্দুমের পরিবারের প্রায় অর্ধেক সদস্য হাসপাতালে জড়ো হন তার ভাই রিয়াদ এবং তার বাবা আবদুল্লাহ কাদ্দুমের কাছে। বাকিদের হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ শিশুটির মরদেহকে শেষ বিদায় জানাতে তখন তাদের বাড়িভর্তি মানুষ।

শিশুটির দাদী বলছিলেন, ‘আলা খুব আগ্রহ নিয়ে নিজেকে প্রি স্কুলের জন্য প্রস্তুত করছিল। আমাদের তাকে নতুন ব্যাগ এবং স্টেশনারি কিনে দেওয়ার কথা ছিল। এটা কী তার অপরাধ ছিল? কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার জন্য নতুন ব্যাগ কেনার স্বপ্ন দেখছিল সে।’

গত শুক্রবার থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৩১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহতদের মধ্যে ছয়টি শিশুও রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ২৬০ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আলা কাদ্দুমের বাবা ও ভাইয়ের মতো আরও অনেকের অবস্থা গুরুতর। তবে যুদ্ধের ধকল সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। বরং দখলদার বাহিনীর অবরোধের ফলে সরবরাহের তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই অবরোধ গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গাজার হাসপাতালগুলোকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও জ্বালানি সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। দফায় দফায় অঞ্চলটিতে হামলে পড়েছে দখলদার বাহিনী। হতাহত হয়েছে নারী ও শিশুসহ বহু বেসামরিক মানুষ। সূত্র: মিডল ইস্ট আই।