পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রভাব অতিরঞ্জিত করেছেন ট্রাম্প: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালেও এর প্রকৃত প্রভাব অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর এই প্রথম জনসম্মুখে এসে খামেনি এই মন্তব্য করলেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে খামেনি বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ঘটনাগুলোকে অস্বাভাবিকভাবে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করেছেন। তিনি এই অতিরঞ্জনটি প্রয়োজনীয় মনে করেছেন।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে কিছুই অর্জন করতে পারেনি। তাদের হামলা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে কোনও তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষতি করেনি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দাবি করেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে এবং প্রতিশোধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে এক মারাত্মক চড় মারা হয়েছে।

তিনি মূলত কাতারে  মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ইঙ্গিত করেছেন।

খামেনি বলেন, আমি মহান ইরানি জাতিকে অভিনন্দন জানাই এই বিজয়ের জন্য, বিশেষ করে মিথ্যাবাদী জায়নবাদী শাসনের ওপর। ইসরায়েল আমাদের হামলায় প্রায় ধসে পড়েছিল।

এর আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার এই যুদ্ধকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন। একইভাবে ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশই নিজেদের জয়ী বলে দাবি করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এই হামলাগুলোর প্রকৃত প্রভাব নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ফাঁস হওয়া গোপন গোয়েন্দা তথ্যে দাবি করা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম হয়তো কেবল কয়েক মাস পিছিয়ে পড়েছে, কিন্তু প্রধান যন্ত্রাংশগুলো ধ্বংস হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, হামলার আগে ইরান হয়তো প্রায় ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে অন্যত্র সুরক্ষিত করে রেখেছে, যা এখন দেশের কোথাও লুকানো রয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর প্রধান জন র‍্যাটক্লিফ বুধবার এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং সেগুলো পুনর্নির্মাণে বহু বছর সময় লাগবে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমাদের আঘাতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি অন্তত কয়েক দশক পিছিয়ে গেছে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ একটি সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পাইলটদের সম্মান রক্ষায় বক্তব্য দেবেন। ট্রাম্প হেগসেথকে ‘যুদ্ধমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত থাকলেও ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে নতুন করে আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা হয়তো একটি চুক্তি সই করবো। আমি নিশ্চিত না।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, একটি বিস্তৃত শান্তিচুক্তির আশা করছি আমরা।

ইরান সব সময় দাবি করে আসছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির বৈধ অধিকার রাখে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফিরে যাওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেছে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬২৭ জন ইরানি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৮ জন।

শনিবার তেহরানে যুদ্ধকালে নিহত শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ও জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।