যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ‘অন্ধকার ছায়া’ মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে অস্ট্রেলিয়ার লেবার সরকার। রবিবার (৪ মে) এমনটাই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী জিম চালমার্স। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনি প্রচারণাতেও মার্কিন বাণিজ্যনীতি ও বৈশ্বিক অর্থনীতির দুশ্চিন্তা ছিল মূল আলোচনার বিষয় ছিল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
লেবার পার্টির নেতা অ্যান্থনি অ্যালবানিজ দুই দশকে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হলেন। রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিতীয় মেয়াদেও ঠিক প্রথম মেয়াদের মতোই একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, সুশৃঙ্খল সরকার পরিচালনা করব।’
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্য-বামপন্থি লেবার পার্টি পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ৭৭ থেকে বেড়ে ৮৬ আসনে পৌঁছাতে পারে। বেশিরভাগ জরিপ বলেছিল, তারা ১৫০ আসনবিশিষ্ট নিম্নকক্ষে তাদের ক্ষীণ দখল বজায় রাখতেই হিমশিম খাবে। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। সোমবার আবার শুরু হবে।
কানাডায় হওয়া সাম্প্রতিক নির্বাচনের প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়াতেও। রক্ষণশীল বিরোধী দলনেতা পিটার ডাটন তার আসন হারিয়েছেন। ভোটাররা শুরুতে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়ে আরও চিন্তিত হয়ে ওঠে।
সিডনির নিজ নির্বাচনী এলাকায় একটি কফি শপে সাংবাদিকদের অ্যালবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়ান জনগণ বিভাজনের নয়, ঐক্যের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তিনি জানান, শৈশবে তার প্রয়াত মা তাকে এখানেই নিয়ে আসতেন।
মূল্যস্ফীতির প্রতি সরকারের মনোভাব নিয়ে ক্ষোভের কারণে পূর্বের একাধিক জরিপে লেবারকে বিরোধী রক্ষণশীল জোটের চেয়ে পিছিয়ে দেখা যাচ্ছিল।
তবে মার্চে পাল্টে যায় পরিস্থিতি, যখন রক্ষণশীলরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমানোর প্রস্তাব দেয়। একে ট্রাম্প প্রশাসনের দপ্তর হ্রাস নীতির সঙ্গে তুলনা করা হয়। একইসঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে ফেরার প্রস্তাবটিকেও নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক হিসেবে সমালোচনা করা হয়।
এপ্রিল ২ তারিখে ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার ফলে বিশ্ববাজারে ঝাঁকুনি লাগে এবং এতে অস্ট্রেলিয়ান ভোটাররা তাদের পেনশন ফান্ড নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন।
অর্থমন্ত্রী জিম চালমার্স অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেন, ‘আমাদের তাৎক্ষণিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এবং এটি আমাদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে-তা।’
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে যা ঘটছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে—তা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর অন্ধকার ছায়া ফেলেছে… আমাদের সেই অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা দরকার এবং আমাদের তা থাকবে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিনিধিরাও অ্যালবানিজ ও তার দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।