রাশিয়া-তুরস্ক গ্যাসচুক্তি স্বাক্ষর, সিরিয়া নিয়ে অগ্রগতি নেই

nonameতুরস্ক ও রাশিয়া সাগরতল দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির ফলে গৃহযুদ্ধ কবলিত ও সিরিয়ায় একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে উভয় দেশ। তবে এ বিষয়ে দুই দেশের অবস্থানগত পার্থক্যে কোনও পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রায় এক বছর আগে রুশ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করার পর উভয় দেশের শিথিল সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইস্তানবুলে অটোমান সাম্রাজ্যযুগের একটি প্রাসাদে অভ্যর্থনা জানান। দুই রাষ্ট্র প্রধানের বৈঠকে বিদ্যুৎ চুক্তি, বাণিজ্য ও পর্যটন, প্রতিরক্ষা ও সিরিয়ার সংঘাত নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে রুশ-তুর্কি সম্পর্ক নিয়ে আজ সারাটা দিন কেটেছে... আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে, রুশ-তুর্কি সম্পর্কের স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে দ্রুত।’

সংবাদ সম্মেলনে পুতিন জানিয়েছেন, তুরস্কের কিছু খাদ্য দ্রব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে রাশিয়া।

গত বছর নভেম্বরে রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। স্বাক্ষরিত গ্যাসচুক্তির ফলে ইউরোপীয় গ্যাসের বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে রাশিয়া।  এতে ইউক্রেন হয়ে রাশিয়ার যে পাইপলাইন ইউরোপে প্রবেশ করেছে তা আর প্রয়োজন হবে না মস্কোর।  এখন পর্যন্ত ইউরোপে প্রবেশের রাশিয়ার প্রধান গ্যাস রুট এটি।

এরদোয়ান আরও জানিয়েছেন, তুরস্কে রাশিয়া নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজও গতি পাবে। দুই দেশের সম্পর্ক শিথিল হয়ে যাওয়ায় যে সময়ের অপচয় হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

২০১৩ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কর্পোরেশন রোজাটম তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায়। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে চলতি বছর আগস্ট মাসে রাশিয়া সফরে যান এরদোয়ান। ওই সময় নিজেদের তিক্ততা ভুলে বাণিজ্য ও বিদ্যুৎখাতে নিজেদের সম্পর্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সোমবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরও সিরিয়া ইস্যুতে এখনও তুরস্ক-রাশিয়ার অবস্থানগত পার্থক্য রয়েছে। এরদোয়ান বিষয়টিকে খুব স্পর্শকাতর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে কথা বলেছেন।

উভয় নেতাই সিরিয়ার আলেপ্পো নগরীতে ত্রাণ সরবরাহে একমত হয়েছেন। পুতিন বলেন, আলেপ্পোতে মানবিক ত্রাণ সরবরাহে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে আমাদের সাধারণ ঐক্যমত রয়েছে। মূল বিষয়... ত্রাণ সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

পুতিন জানান, তিনি এরদোয়ানের সঙ্গে একমত হয়েছে সামরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে। এরদোয়ান জানিয়েছেন, সিরিয়ার সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সিরিয়া নিয়ে দুই দেশের অবস্থানগত পার্থক্য অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত আছে বিদ্রোহীরা। রাশিয়া আসাদ সরকারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। বিপরীত দিকে তুরস্ক সিরিয়ার বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে। শনিবারই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলেপ্পোতে রুশ বিমান হামলা বন্ধে ফ্রান্সের প্রস্তাবে ভেটো দেয় রাশিয়া। সূত্র: রয়টার্স।

/এএ/