ক্রিমিয়া সেতু রাশিয়ার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের একমাত্র সেতুটি আক্রান্ত হয়েছে। ৮ অক্টোবর শনিবার সেতুটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের সেতুটির সড়কপথের কিছু অংশ ধসে যায়। আক্রান্ত হয় সেতুর রেলপথের অংশটিও। নিহত হয় অন্তত তিন জন। ক্রিমিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রাশিয়াকে যুক্ত করা একমাত্র এই সেতুটিতে বিস্ফোরণের ঘটনাকে মস্কোর জন্য একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু বহুল আলোচিত এই ক্রিমিয়া সেতু রাশিয়ার জন্য আসলে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়ার দখল নেয় রাশিয়া। এর চার বছরের মাথায় ২০১৮ সালে বহুল প্রতিক্ষীত এই ক্রিমিয়া সেতুর উদ্বোধন করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে ব্যয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। কের্চ প্রণালির ওপর দিয়ে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু আজভ সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরকে সংযুক্ত করেছে।

ইউরোপের দীর্ঘতম এই ব্রিজে আলাদা সড়ক ও রেলপথ রয়েছে। ২০১৮ সালে উদ্বোধনের পর থেকে বেসামরিক ও বাণিজ্যিক চলাচলের জন্য এটি রাশিয়ার একটি অপরিহার্য রুট হয়ে উঠেছে।

ব্রিজটি দিয়ে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। আর এর রেলপথ অংশ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০টি ট্রেন চলাচল করতে পারে।

বছরে এক কোটি ৪০ লাখ যাত্রী যাতায়াতের জন্য এই সেতুটি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ব্রিজটি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী আনা নেওয়া করা হয়।

বছরের পর বছর ধরে সেতুটি রাশিয়াকে সমুদ্র ও বিমান রুটের তুলনায় অনেক কম খরচে ক্রিমিয়া থেকে লোকজনের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনকে সহজ করে তুলেছে। পণ্যসামগ্রীর অবাধ প্রবাহের ফলে ক্রিমিয়ায় বিভিন্ন পণ্যের দাম কমে এসেছে। অঞ্চলটিতে উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। যাতায়াত সহজ হওয়ায় পর্যটনের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

রেল সংযোগকে কেন্দ্র করে ক্রিমিয়ার বন্দরে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বাণিজ্যিক তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।  রাশিয়ার রফতানি বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ক্রিমিয়ার অবদান বেড়েছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, শনিবারের বিস্ফোরণের ফলে ক্রিমিয়ায় কিছু পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ক্রিমিয়ার বন্দর থেকে পণ্যসামগ্রী রফতানিতেও এ ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আর বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সেটি ক্রিমিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে।

শনিবার ব্রিজটিতে ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তার ধারণা কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে এমনটা হয়নি। বরং নিচ থেকে কোনও হামলা হয়ে থাকতে পারে। জরুরিভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতুটিতে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণকে রাশিয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিটাইম সিকিউরিটির অধ্যাপক ক্রিস বেল্লামি। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সেতুটি ক্রিমিয়ায় রুশ বাহিনীর জন্য রশদ সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এটি শুধু রুশ সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যদের দিয়েই নয়, বরং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যক্তিগত গার্ড দিয়েও ব্যাপকভাবে সুরক্ষিত ছিল। এটি অবিশ্বাস্যভাবে সফল হামলা। ধরে নিচ্ছি ইউক্রেনই এই হামলা চালিয়েছে।’

টুইটারে দেওয়া পোস্টে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের সহযোগী মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, ‘ক্রিমিয়া সেতু দিয়ে শুরু। অবৈধ সবকিছু ধ্বংস করতে হবে, চুরি যাওয়া সবকিছু ইউক্রেনকে ফেরত দিতে হবে, রাশিয়ার দখলে থাকা সবকিছু তাদের ছাড়তে হবে।’ সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, রয়টার্স।