আইএসে যোগ দিয়ে ডেয়ার থেকে মরিয়ম হওয়া ব্রিটিশ নারীর গল্প

গত শতাব্দির শেষ দিকে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আফগানিস্তান কিংবা বসনিয়াতে যুদ্ধ করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বিষয় ছিল। তারা ছিল সবাই পুরুষ। কিন্তু আইএসের উত্থানের পর তা রাতারাতি পাল্টে গেছে। আইএস ব্যাপকভাবে নারী কর্মী ও যোদ্ধাদের সংগ্রহ করছে। এসব নারীদের বেশিরভাগই উঠতি বয়সের। অনলাইনেই তারা আইএসের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এরপর আইএস দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে তাদের নাম ও পরিচয়। তেমনই একজন ডেয়ার।

২৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ তরুণী ডেয়ার আইএস-এ যোগ দেওয়া একেবারে প্রথমসারির ব্রিটিশ নাগরিক। ২০১২ সালে আইএস-এ নাম লেখাতে সে সিরিয়ায় যায়। তিনি সঙ্গে করে তার একমাত্র শিশু ইসাকেও নিয়ে গিয়েছিল।

ডেয়ারের জন্মও দক্ষিণ লন্ডনের এক খ্রিস্টান পরিবারে। কিন্তু কিশোর বয়সে সে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। চ্যানেল ফোর-এ ব্রিটিশ নারীদের আইএস যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে নির্মিত এক প্রামাণ্যচিত্রে তার কথা উল্লেখ করা হয়।

সিরিয়ায় পৌঁছে তার নতুন নাম হয় মরিয়ম। তখন তার বিয়ে হয় সুইডিশ বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গি আবু বকরের সঙ্গে। পরে আবু বকর নিহত হয়।

প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তখন তার গর্ভে ছিল আরেকটি শিশু। কিন্তু ডেয়ার সিরিয়া ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে এবং সেখানেই তার সন্তানকে বড় করে তুলবে বলে জানিয়েছিল। তার এই বক্তব্য আইএর প্রপাগান্ডায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ডেয়ারই আইএস-এর হাতে বন্দি জেমস ফলি-কে জবাই করে হত্যা করেছিল।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার ছেলে চার বছর বয়সী ইসা-কে আইএস-এর এক প্রপাগান্ডা ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে সে আইএস-এর ‘হেড ব্যান্ড’ পরেছিল। ওই ভিডিওতে ইসা বলছিল, ‘আমরা এখানে সব কাফেরদের হত্যা করবো।’

নিউ আমেরিকা নামক গবেষণা সংস্থার মতে, সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে পশ্চিমের অন্তত সাড়ে চার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত সাড়ে চারশ নারী রয়েছেন। আইএসে যোগ দেওয়া এসব নারীদের গড় বয়স ২১ বছর। এসব নারীর এক তৃতীয়াংশ আবার ধর্মান্তরিত মুসলমান। অনেকেই টুইটারের মাধ্যমে আইএসের কর্মী সংগ্রহকারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। আবার কারও কারও জঙ্গিদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে অথবা তাদের আত্মীয় কিংবা প্রেমিক সিরিয়া বা ইরাকে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করছে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রিগিট লেবান্স নাকোস, যার অধ্যয়নের বিষয় সন্ত্রাসবাদ, তিনি বলেন, এসব নারীরা সাধারণ কিশোরী। তারা নিজেদের হেয়ার ড্রায়ার সম্পর্কে জানতে চায়। তারা অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী। তারা যেমন আইএসের ভক্ত তেমনি পপ তারকাদেরও।

এসব নারীদের অনেকেই অবিবাহিত। তাদের আর্থসামাজিক পটভূমি, জাতীয়তা আলাদা। তবে তারা আইএসে যোগ দেওয়া পুরুষদের চাইতে উচ্চ শিক্ষিত। পুরুষদের তুলনায় নিহতের সংখ্যা কম এবং দেশে ফেরার পর তারা পুরুষদের চাইতেও ভয়ঙ্কর বলে মনে করছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। সূত্র: ডেইলি মেইল, নিউ ইয়র্ক টাইমস।

/এএ/