প্রজেক্ট সার্ভেটর: জঙ্গিবাদ দমনে ব্রিটিশ পুলিশের আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ

আজ যুক্তরাজ্য পুলিশ জঙ্গিবাদ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর জাল আরও বিস্তৃত করার একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। নতুন এই সন্ত্রাস দমন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার দরুন একদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা প্রকাশ্যে কাজ করবেন, অন্যদিকে জঙ্গিবাদ দমনে নিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারাও মাঠে থাকবেন সাদা পোশাকে। জঙ্গিবাদ ও অন্যান্য অপরাধ ‘প্রতিরোধ, চিহ্নিত এবং ধ্বংস’ করার লক্ষ্যে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রজেক্ট সার্ভেটর নামের বিশেষ পরিকল্পনাটির পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের নভেম্বরে। রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় তখন থেকে কার্যকর করা ওই কৌশল  বৃহস্পতিবার থেকে পুরো শহরে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রজেক্ট সার্ভেটরের সদস্যদের যেকোনও সময়ে যেকোনও স্থানে মোতায়েন করা হতে পারে। বিশেষ ওই বাহিনীর সদস্যরা সম্ভাব্য অপরাধীদের সনাক্তে বিশেষভাবে দক্ষ।

Untitled-1

মেট্রোপলিটান পুলিশের অধীনস্ত প্রজেক্টে সার্ভেটরের সদস্যরা লন্ডন পুলিশ, ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা পুলিশ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলেই জঙ্গি দমনের কাজ করবেন। বাণিজ্যকেন্দ্র, পর্যটক সমাগম স্থান এবং যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমনসব স্থানসহ লন্ডনের যেকোনও স্থানে প্রজেক্ট সার্ভেটরের কর্মকর্তারা অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপস্থিত হতে পারেন।

লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রজেক্ট সার্ভেট প্রধান নিক অ্যাল্ডওয়ার্থ বলেছেন, ‘সতর্ক থাকার মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য অপরাধীদের জন্য অপরাধ সংঘটিত করার কাজতি কঠিন করে তুলতে পারি।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রতিদিন ব্যবসায়ী, নিরাপত্তা কর্মী, এলাকাবাসী ও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পরিস্থিতির ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখবেন প্রজেক্ট সার্ভেটরের কর্মকর্তারা, যাতে জঙ্গিসহ অন্যান্য অপরাধীদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।’

লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রজেক্ট সার্ভেটরের অধীনে দৃষ্টিগ্রাহ্য ও সাদা পোশাক, উভয়ভাবেই পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠে সক্রিয় থাকবেন। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য থাকবে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর, ঘোড়সওয়ারী বিশেষ দল, সশস্ত্র কর্মকর্তা, নিরাপত্তা চৌকি, গাড়ির নম্বরপ্লেট চিহ্নিত করার কমপিউটারভিত্তিক ব্যবস্থা (এএনপিআর) এবং নিরাপত্তা ক্যামেরা। সন্ত্রাস দমনের এই সমন্বিত কৌশল নিয়ে লন্ডন পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা ও পরীক্ষা করেছে যুক্তরাজ্যের ‘সেন্টার ফর দ্যা প্রটেকশন অফ ন্যাশনাল স্ট্রাকচার।’

পুলিশ কর্মকর্তা নিক অ্যাল্ডওয়ার্থ বলেছেন, ‘হঠাৎ করে প্রেজেক্ট সার্ভেটরের কর্মকর্তাদের রাস্তায় মোতায়েন হতে দেখলে জনগণের চিন্তিত হওয়া উচিত হবে না। বরং আমি মনে করি, তাদের পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। সন্ত্রাসবাদ দমনে নাগরিকরা পুলিশকে সন্দেহজনক ঘটনার বিষয়ে জানাতে পারেন।’ লন্ডনভিত্তিক ন্যাশনাল প্রজেক্ট সার্ভেটর টিমের আরেকজন কর্মকর্তা হেলেন আইজ্যাক জানিয়েছেন, ‘২০১৪ সালে যখন প্রজেক্ট সার্ভেটর শুরু হয়েছিল তখন সেখানে পুলিশ বাহিনীর আটটি শাখা যুক্ত ছিল। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।

সার্ভেটরের কর্মকর্তারা অনেক সন্দেহভাজনকে আটক করেছেন।  তাদের মাধ্যমে উদ্ধার হয়েছে মাদকদ্রব্য থেকে শুরু করে বন্দুক পর্যন্ত।  বীমাবিহীন গাড়ি জব্দ করা থেকে শুরু করে ফেরারি আসামি গ্রেফতার করা পর্যন্ত অনেক সাফল্য পেয়েছেন এই কর্মকর্তারা। আর অপরাধীদের সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য উদ্ধার তো রয়েছেই, যা পুলিশের সকল বাহিনীর কাজে লাগছে।

প্রজেক্ট সার্ভেটরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এতে সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা। নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জনাইয়ে বলা হয়েছে, সন্দেহজনক কোনও কিছু দেখলে তারা যেন পাশে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর কোন সদস্য বা স্থানীয় থানায় জানান। লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশ ২০১৬ সালে প্রজেক্ট সার্ভেটর পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা শুরু করেছিল। এরপর থেকে তারা অন্তত বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে অন্তত ৫০০ তথ্য পেয়েছে এবং ৫৫০টিরও বেশি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে, যাতে ১৭৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক, অর্থপাচার, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

প্রজেক্ট সার্ভেটরের অধীন ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ দেশটির রেল ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করতে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ১০২ জনকে  গ্রেফতার করেছে। এসব গ্রেফতারের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে লন্ডনে। ওই সময়ে তারা ১৫ জন ফেরারি আসামিকে গ্রেফতার করছে, ৭টি হাতিয়ার উদ্ধার করেছে এবং অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে  ৩৫০টি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে।