লন্ডনের ফিন্সবারি মসজিদে হামলায় বাংলাদেশি নিহতের এক বছর

উত্তর লন্ডনের ফিন্সবারি পার্ক মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মকরম আলীকে হত্যার এক বছর পূর্তি আজ। ২০১৭ সালের ১৯ জুন মসজিদটির সামনে দাঁড়ানো কয়েকজন মানুষের ওপর চলন্ত গাড়ি চালিয়ে হামলা করে উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী ড্যারেন ওসবর্ন। এতে ৫১ বছরের মকরম আলী নিহত হন। এ সময় অন্য মুসল্লিদেরও হত্যার চেষ্টা করে ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের বাসিন্দা ওসবর্ন। এতে আহত হন আরও নয়জন। সেই ঘটনার স্মরণে মঙ্গলবার এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।stream_img

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, গতবছর ফিন্সবারি পার্ক মসজিদে নিরপরাধ প্রার্থনাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে যে কাপুরুষোচিত হামলা চালানো হয়েছে তা ছিল আমাদের সবার ওপর চালানো হামলা। সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের বিভক্ত করা। কিন্তু আমরা এটা হতে দেবো না।

তিনি বলেন, আমরা নিহত মকরম আলীসহ এই হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ করছি। লন্ডনের বৈচিত্র্য এবং এখানে বহু সম্প্রদায়ের উপস্থিতিকে আমাদের জোরালোভাবে গ্রহণ করা উচিত। এই বৈচিত্র্যই লন্ডনকে দুনিয়ার অন্যতম মহৎ শহরে পরিণত করেছে।

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, যারা বর্ণবাদের মাধ্যমে আমাদের বিভক্ত করতে চায় তারা কিছুই অর্জন করতে পারবে না।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে জেরেমি করবিন বলেন, আমরা চিরদিনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হবো; যা কখনও বিভক্তির দিকে গড়াবে না।

নিহত মকরম আলীর কন্যা রুজিনা আখতার বলেন, আমাদের নিরপরাধ বাবা ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদের শিকার। তার এমন মৃত্যু আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।

রুজিনা আখতার বলেন, তিনি ছিলেন একজন সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি কারও অনিষ্ট চাইতেন না।

ফিন্সবারি পার্ক মসজিদের মুসল্লিদের ওপর হামলাকারী ৪৮ বছরের ড্যারেন ওসবর্ন’কে গত ফেব্রুয়ারিতে এ ঘটনায় ৪৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, বাকি জীবন তাকে কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর কাটাতে হবে।

হামলাকারী ড্যারেন ওসবর্ন আদালতে দোষ স্বীকার করেনি। লন্ডনের উলউইচ ক্রাউন আদালতে ওসবর্ন দাবি করে, হামলার একেবারে শেষ মুহূর্তে ডেভ নামের এক ব্যক্তি গাড়ির চালকের আসনে ছিল। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা ওসবর্নকে বলতে শুনেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এখন আপনারা আমাকে হত্যা করতে পারেন।

রায় ঘোষণার আগে জুরি বোর্ডের সদস্যরা প্রায় এক ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। পরে তারা ওসবর্নকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হামলার একমাস পূর্বে বিবিসি’র একটি নাটক থ্রি গার্লস দেখে মুসলিমবিদ্বেষীতে পরিণত হয় ওসবর্ন। নাটকটিতে উত্তর ইংল্যান্ডে একটি শিশু যৌনচক্রের কথা বলা হয়েছে। ওসবর্নের ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। তাতে লেখা রয়েছে, আমাদের রাস্তায় সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে। মানুষ কি তা বুঝতে পারছে না? আমাদের সবুজ ও ফসলি মাঠে এটা ঘটছে। ইসলামি মতাদর্শ এখানকার জন্য নয়, শরিয়া আইনও এখানে প্রযোজ্য নয়।

রায়ে আদালত জানান, ওসবর্ন হামলাটি চালায় তার মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে। পরে সে একটি কাহিনী দাঁড় করায় যাতে জুরিরা প্রভাবিত হন। আমরা নিশ্চিত ছিলাম এটা একটি সন্ত্রাসী হামলা। এখন তাকে পরিণাম ভোগ করতে হবে।

নিহত মকররম আলীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সরুয়ালায়। মকররমের পরিবার দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছেন লন্ডনে। ১২ বছর বয়সে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। একটানা প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে তিনি বিশ্বনাথের দৌলতপুরে বিয়ে করেন। কয়েক বছর পর স্ত্রীকেও লন্ডনে নিয়ে যান। সেখানে জন্ম হয় চার মেয়ে ও দুই ছেলের।