ব্যাংকিং খাতের দুর্বৃত্তদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে: গর্ডন ব্রাউন

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের দুর্বৃত্তদের সাজার ব্যবস্থা না করলে তাদের কর্মকাণ্ড আবারও বিশ্ব অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ক্রমেই আরেকটি ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তার ভাষায়, এই যাত্রা অনেকটা ঘুমের মধ্যে হেঁটে চলার মতো, যিনি হাঁটছেন তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। সে পরিস্থিতি ঠেকাতেই আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ব্রাউন বলেছেন, ব্যাংকগুলোর সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর সরকার অর্থ ঢেলে তাদের বেইল আউটের ব্যবস্থা করবে, এটা চলতে পারে না। এমন সুযোগ থাকলেই বরং ব্যাংকিং খাতের দুর্বৃত্তরা সুযোগ খুঁজবে। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছেন, বিশ্ব এখন যথাযথ নেতৃত্বের শূন্যতায় ভুগছে। সমস্যার সমাধানে এক সঙ্গে কাজ করার বদলে একে অপরকে দোষারোপের প্রবণতা দেখা যেতে পারে সামনের সংকটের দিনগুলোতে।সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন

গর্ডন ব্রাউন সেই সময়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক লেম্যান ব্রাদার্স দেউলিয়া ঘোষণা করে নিজেদের এবং সেই সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ঘটে বিপর্যয় । ২০০৭-২০০৮ সালের ওই ঘটনায় মন্দার ঢেউ আছড়ে পড়ে অন্যান্য দেশেও। ২০০৯ সালের দিকে ইউরোপেও দেখা দেয় ‘ইউরোপিয়ান ডেবট ক্রাইসিস।’ গর্ডন ব্রাউন ২০০৭-২০১০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সে সময় যুক্তরাজ্যও বিপর্যয় মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল যা বেইল আউট নামে পরিচিত।

৬৭ বছর বয়সী গর্ডন ব্রাউনের ভাষ্য, ‘আমরা ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বাড়তে থাকা ঝুঁকির বিষয়ে আমাদের অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা একটা নেতৃত্বহীন বিশ্ব ব্যবস্থায় রয়েছি।’ ব্রাউন মনে করেন, অর্থ কোথায় এবং কী শর্তে লগ্নি করা হয়েছে তা পর্যবেক্ষণের মতো কোনও বৈশ্বিক ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। লগ্নির প্রবাহের ওপর নজর রাখা এবং বিপর্যয়ের আগাম সংকেত পাওয়ার কোনও কার্যকর ব্যবস্থা এখনও নেই। ২০০৭-২০০৮ সালের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে ব্রাউনের মূল্যায়ন, ‘আমরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কাজ করেছি, কিন্তু আসল কাজগুলো বাকি।’

আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী নয় মন্তব্য করে ব্রাউন বলেছেন, সরকার তাদের বেইল আউটের ব্যবস্থা  করতে অর্থ ঢালবে এই প্রত্যাশায় প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো আবারও আর্থিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ব্যাংকিং খাতের দুর্বৃত্তদের সাজার ভয় দেওয়া এবং দুর্বৃত্তপনার সূত্রে বিপর্যয় ঘটলে সরকার অর্থ ঢেলে বেইল আউট করবে না, এমন কঠিন বার্তা দেওয়া দরকার। ‘আপনাকে খোলাখুলি বলি: যতদিন আমরা এ বিষয়ে যথাযথ আইন তৈরি করতে এবং দোষীদের নিশ্চিতভাবে শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারছি ততদিন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারদের জেলে রাখা উচিৎ। তা না হলে সাধারণ মানুষ এই বার্তাই পাবে যে ব্যাংকিং খাতের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কিছু করা যায়নি; তারা পার পেয়ে গেছে।’

বিবিসিকে ব্রাউন আরও বলেছেন, আগেরবার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় যেসব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল, এখন তা আর পাওয়া সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে, বাণিজ্য যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশগুলোর পারস্পারিক বোঝাপড়া এখন এতো কম যে সংকটের সমাধানে একযোগে আজ করার বদলে দেশগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করা শুরু হবে।