থেরেসা মের খোলা চিঠি: ব্রেক্সিট আনবে ব্রিটেনের ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে তার নেতৃত্বে হওয়া ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চুক্তির প্রতি সমর্থন জানাতে ব্রিটিশ নাগরিকদের প্রতি খোলা চিঠি লিখেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, তার পরিকল্পিত ব্রেক্সিট চুক্তিটি যুক্তরাজ্যের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে এবং আগামী বছর যখন চূড়ান্তভাবে যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করবে তখন তা হবে ‘পুরো দেশের জন্য এক পুনর্মিলন।’ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শেষে যুক্তরাজ্য এখন সেটি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তা করতে গেলে আগে সংসদে সেটিকে পাস করাতে হবে। আর আশঙ্কা সেখানেই। কারণ অপরাপর দলগুলোর সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি খোদ কনজারভেটিভ পার্টির অনেক সংসদ সদস্য চুক্তির বিরোধিতা করেছেন।2018-11-24T180737Z_1787528388_RC1DA7062670_RTRMADP_3_BRITAIN-EU

ব্রিটিশদের মধ্যে ব্রেক্সিট নিয়ে রয়েছে প্রবল ভিন্নমত। একদিকে ব্রেক্সিট গণভোট পরবর্তী সময়ে দেশটির জনগণের মনোভাব পাল্টে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে জরিপে, তেমনি ব্রেক্সিটবিরোধীদের অনেকে দাবি তুলেছেন আরেকটি গণভোটের। ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করা নিয়ে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করেছেন দুই দুইজন ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী। তাদের সঙ্গে সরকারি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন টোরি। এর পাশাপাশি, থেরেসা মেকে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সংসদীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিতে আস্থা ভোটের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন কনজারভেটিভ সংসদ সদস্য। ৪৮ জন দাবি করলেই মের নেতৃত্বের বিষয়ে ডাকা হবে আস্থা ভোট।

জাতির উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে থেরেসা মা ব্রিটেনবাসীর উদ্দেশে লিখেছেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত চুক্তিটি যুক্তরাজ্যের ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষার’ জন্য প্রণীত এবং তা যুক্তরাজ্যে সব অংশের জন্যই প্রযোজ্য। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর হয়ে গেলে শুরু হবে যুক্তরাজ্যের ‘জাতীয় জীবনের জন্য এক নতুন অধ্যায়।’ তখন ফুরিয়ে যাবে ‘লিভ’ আর ‘রিমেইনের’ বিভক্তি। ‘জাতি হবে আবার ঐক্যবদ্ধ।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ব্রেক্সিট চুক্তিটি পাস করানোর বিষয়ে সংসদ সদস্যের কাছে ‘জানপ্রান দিয়ে’ প্রচারণা চালাবেন তিনি। তিনি তাদের অনুরোধ করবেন, যেন তারা গণভোটের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেন। মের ভাষ্য, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে ইইউ অঞ্চলের নাগরিকদের অবাধ চলাচল সীমিত হবে এবং ইইউকে যে প্রতিবছর বিশাল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হতো তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হয়ে গেলে যুক্তরাজ্যের সরকার অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও আবাসনের বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে।

বিবিসি লিখেছে, ইইউ নেতারা ব্রাসেলসে জানাবেন চুক্তিটির বিষয়ে তাদের মতামত। সেখান থেকে সম্মতি পাওয়া হয়ে গেলে তার জন্য ব্রিটিশ সংসদে যে ভোট দরকার হবে তার আয়োজন করা হবে ডিসেম্বরে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাট, এসএনপি, ডিইউপিসহ খোদ কনজারভেটিভ পার্টির অনেক সদস্য এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা সংসদে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে মের প্রস্তুত করার চুক্তিটির বিরোধিতা করবেন।

সেখানে যদি চুক্তিটি পাস হয়েও যায়, তাহলেও সেটিকে চূড়ান্তভাবে ইইউতে পাঠাতে হবে। সেখানে ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২০টি সদস্য রাষ্ট্র চুক্তির শর্তের পক্ষে ভোট দিলে তবেই চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে চুক্তিটি। ইইউ পার্লামেন্টে সেই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে পারে ২০১৯ সালের প্রথম দিকেই।

যুক্তরাজ্যের সংসদে যদি ব্রেক্সিট চুক্তিটি হেরে যায় তাহলে কোনও চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকরের দিকে যেতে হতে পারে, যাতে পরে শর্তগুলো চূড়ান্ত করা যায়। থেরেসা আশাবাদের বিরোধিতা করে কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য সারাহ ওলাস্টোন মন্তব্য করেছেন, ‘উজ্জ্বল নয় সামনে এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ।’

ইউকেআই পির সাবেক নেতা নাইজেল ফারাজ থেরেসা মের প্রস্তুত করা চুক্তিটিকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে চুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এটা যদি ব্রিটিশ সংসদে পাস না হয় তাহলে যারা আবার ব্রেক্সিট গণভোট চায় তারা সুযোগ নিতে পারে।