ট্রাক ড্রাইভার সংকটে যুক্তরাজ্যে খাদ্যের অভাব?

যুক্তরাজ্যে জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড কোম্পানি নান্দোস ও ম্যাকডোনাল্ডস ছাড়াও অনেক নামিদামি রেস্টুরেন্ট ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে পারছে না। সুপারমার্কেটগুলোতেও একই সংকট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যে সংকট নেই বরং ব্রেক্সিট এবং করোনা মহামারির ফলে শ্রমিক ঘাটতিতে পণ্য সরবরাহে জটিলতা তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন ব্রিটেন।

গত জুলাইয়ের দিকে কোভিড-১৯ এবং ব্রেক্সিটের কারণে পণ্যবাহী ভারী যান চলাচলে সংকটে পড়ে যুক্তরাজ্য। তখন থেকেই লরি চালকের সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। সে সময় বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে সতর্ক করে জানান, যুক্তরাজ্যে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিপদ হতে পারে।

সেপ্টেম্বরে এসে ব্রিটেনের সুপারমার্কেটগুলোতে সংকট চোখে পড়ার মতো। ফাস্ট ফুড কোম্পানি নান্দোস, ম্যাকডোনাল্ডস এবং গ্রেগস-এর মতো জনপ্রিয় বেকারি প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা মহামারি ও ব্রেক্সিট এর কারণে মেনু সীমিত করেছে। সম্প্রতি এমন খবর জায়গা করে নিয়েছে ব্রিটেনের একাধিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।

সুপারমার্কেটগুলোর তাকে খাবার কম এবং রেস্টুরেন্টের মেনুতেও এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে খাবারের দামও।

সম্প্রতি মুরগি ফুরিয়ে যাওয়ায় জনপ্রিয় গ্রিলড চিকেন রেস্টুরেন্ট নান্দোস, কিছু ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রেগস বেকারি ও ম্যাকডোনাল্ডসের মতো অন্যান্য বড় ব্র্যান্ডের আউটলেটগুলোও একই ধরনের সরবরাহ সমস্যার মুখোমুখি।

স্টিভ উইলসন নামের এক লোক খাবার ডেলিভারি অ্যাপ জাস্ট ইট -এ মুরগির মেনু অর্ডার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের তালিকায় শুধু এক ধরনের খাবার ছিল।

পরবর্তীতে তিনি অন্য শাখায় ফোন করেন। তারা জানান, মুরগির সরবরাহে ঘাটতি থাকায় কিছু খাবার বন্ধ রাখতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক বিচ্ছেদের কারণেই সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

ব্রিটিশ পোলট্রি কাউন্সিলের তথ্যমতে, অনেক শ্রমিক ইইউ-তে ফিরে যাওয়ার ফলে লোকের অভাব রয়েছে। ব্রাসেলসভিত্তিক ইউরোপীয় সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল ইকোনমিক-এর প্রধান ডেভিড হেনিং-এর মতে করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক এবং ব্রেক্সিটের মতো সমস্যা রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী ট্রাক চালকের সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের এক মাত্র জায়গা যেখানে ট্রাক চালকের অভাব নেই। সমস্যা থেকে উত্তরণে এ সুযোগ কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন রোড হাউলেজ অ্যাসোসিয়েশনের নীতি প্রধান রড ম্যাকেনজি।

আরেক গবেষণায় এসেছে, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১৪ হাজার ড্রাইভার যুক্তরাজ্য ছেড়ে গেছেন। আর ২০২১ সালে ফিরে এসেছেন মাত্র ছয়জন। পণ্য আছে কিন্তু সরবরাহের জন্য ড্রাইবারের সংখ্যা খুবই কম।

চলমান সংকট কাটাতে বড় পণ্যবাহী যান বাহন চালাতে পারে এমন যোগ্য সেনা সদস্যদের কাজের লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কিন্তু শিল্প নেতারা বলছেন, এই পদক্ষেপটি যথেষ্ট নয়।