এম‌পি খুনে সন্দেহে জ‌ঙ্গিবাদ, মুসলিম কমিউনিটিতে উদ্বেগ

যুক্তরাজ্যে এম‌পি খুনের ঘটনার সঙ্গে জ‌ঙ্গিবাদের সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশের এমন সন্দেহের খবরে দেশটির মুস‌লিম ক‌মিউনিটিতে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

শুক্রবার দুপুরে নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের সঙ্গে বৈঠককালে ছুরিকাঘাতে নিহত হন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ডেভিড অ্যামেস। এ ঘটনায় ছুরিসহ আটক হওয়া ঘাতক ২৫ বছরের সোমালীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ না‌গ‌রিককে শুক্রবার ঘটনার পরপরই গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে শ‌নিবার সকালে তার প‌রিচয় প্রকাশ করা হয়। এদিন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মুসলিম জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা জানায় পুলিশ।

ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশটিতে জঙ্গি হামলার শঙ্কার কথা জানান দি‌চ্ছিল। এর মধ্যেই একজন পার্লামেন্টারিয়ানের হত্যার ঘটনায় মুস‌লিম জঙ্গিবাদের সং‌শ্লিষ্টতার খবরকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন মুসলিম ক‌মিউ‌নি‌টির নেতারা।

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ৩০ লাখের বেশি মুসলিমের মধ্যে অন্তত সাত লাখই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।

সাউথ লন্ডনের লেবার পা‌র্টির প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ ইসলাম। এবার তি‌নি ক্রয়োডন কাউন্সিলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শনিবার সকালে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ মুসলিমদের বিপাকে ফেলবে। যুক্তরাজ্যের মুসলিম কমিউনিটিতে এই মুহূর্তে বাংলাদেশিরা নানা সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেই সময়ে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য উদ্বেগের।

এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যে ইউকিপ, উগ্র ডানপন্থী ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টির মতো বর্ণবাদী দলগুলো সুযোগ পাবে। অতীতের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ ধরনের কোনও জঙ্গি হামলার পর যুক্তরাজ্যে হেট ক্রাইম বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ বেড়ে যায়। আর এসবের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন মুসলিমরা। বিশেষ করে দা‌ড়িওয়াল‌া মানুষ, হিজাব প‌রি‌হিতা মুস‌লিম নারীরা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।

মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ইসলাম সব সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এই সত‌্যকে ধারণের পাশাপা‌শি আমাদের সন্তানদের প্রজন্মকে জ‌ঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে।

‘বেকায়দায় পড়বেন ব্রিটিশ মুসলিমরা’

বাংলাদেশি ক‌মিউ‌নি‌টির বর্ষীয়ান সাংবা‌দিক, লেখক ড. রেনু লুৎফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পৃথিবীতে মুসলমানদের খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। প্রধান কারণ হলো অশিক্ষা ও কুশিক্ষা। সন্দেহ নেই এই ঘটনা ব্রিটিশ মুসলিমদের বেকায়দায় ফেলবে। তবে নিরাপত্তার জন্য এখন ব্রিটিশ সরকার যে আইন করবে তাতে মুসলমানদের আলাদা করে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ আছে বলে মনে হয় না।  মিডিয়া একে মুসলিম নাম দেবে। কিন্তু উগ্রবাদীর কোনও ধর্ম নেই। যেমন এম‌পি জো কক্সের হত্যাকারীরও ছিল না। ব্রিটিশ মুসলমানদের উচিৎ, এই অপরাধী ও অপরাধের বিরুদ্বে কথা বলা, জনমত গঠনে কাজ করা।

লন্ডনের চ্যান্সেরি সলিসিটার্সের মালিক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন বলেন, অতীতেও আমরা দেখেছি যখনই কোনও ঘটনায় মুসলমানের নাম আসে তখন পুরো সম্প্রদায়কে জড়িত করা হয়। এটি বিশ্বজুড়েই হচ্ছে। কিন্তু বহু জাতি ও ধর্মের মানুষকে একসঙ্গে ধারণ করা ব্রিটেনের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের কাছে আমরা এটা আশা করি না। ব্যক্তির অপরাধ বা সংশ্লিষ্টতার যে কোনও ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আগে কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপানো অনুচিত।

তিনি আরও বলেন, একজন সংসদ সদস্য বা যে কোনও মানুষকে খুন করার মতো জঘন্য কাজের সঙ্গে ধর্ম বা বিশ্বাসের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না।