২৪ ঘণ্টায় পাঁচ উপ‌দেষ্টার পদত্যাগ, গুঞ্জন বরিসকে নিয়ে

২৪ ঘণ্টার ম‌ধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব‌রিস জনস‌নের পাঁচ উপ‌দেষ্টা একে একে পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ শুক্রবার অপরা‌হ্নে পদত্যাগ ক‌রেন এলেনা নারোজান‌স‌কি। মাত্র একদিনের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টেন ডাউনিং স্ট্রিটের উপদেষ্টাদের এই পদত্যাগে রাজনী‌তিতে নতুন নাটকীয়তার সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। সকাল থে‌কে আবহাওয়ার তাপমাত্রা যত কমে আসতে থাকে তত যেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উত্তাপ ছড়া‌চ্ছে।

করোনাকালে নিয়ম ভেঙে পার্টি করা নিয়ে বরিস জনসন খোদ দ‌লের ভেত‌রে প্রবল চাপে আছেন। দলের অন্দরে ও বাইরে তার ইস্তফার দাবি উঠেছে। এই অবস্থায় তার চিফ অব স্টাফসহ চারজন সহকারী বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন। প্রথমে তার ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশন জ্যাক ডয়েল ও পলিসি প্রধান মুনিরা মির্জা ইস্তফা দেন। পা‌কিস্তানি বং‌শোদ্ভুত মু‌নিরা দীর্ঘদিন ধ‌রে ব‌রি‌সের সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন। এরপর পদত্যাগ করেন চিফ অব স্টাফ ড্যান রসেনফিল্ড। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল ব্যক্তিগত সহকারী মার্টিন রেনল্ডসও পদত্যাগ করেছেন।

জনসন তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, তারা করোনাকালে যে কাজ করেছেন, সরকার ও ১০ ডাউনিং স্ট্রিটকে যেভাবে সাহায্য করেছেন, তাতে তিনি কৃতজ্ঞ।

করোনাকালে বিধি ভেঙে জনসন ও তার কার্যালয়ের কর্মীরা একাধিক পার্টি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জনসনের পার্টি নিয়ে এখন লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। প্রশাসনিক তদন্তেও দেখা গেছে, জনসন পার্টি করেছেন। তারপর এই সহকারীরা পদত্যাগ করলেন।

বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টির বেশ কিছু সদস্যও তার পদত্যাগ চাইছেন। বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭ জন এমপি জনসনের বিরুদ্ধে দলের কাছে অনাস্থার চিঠি দিয়েছেন। ৫৪ জন এমপি অনাস্থা জানালে দলে নেতৃত্ব নিয়ে ভোটাভুটি হবে। বিরোধী দল লেবার পার্টি ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছে।

ব্রিটে‌নের রাজনীতি‌তে শুক্রবা‌রের বি‌কে‌লে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি গ‌তি পেলেও ব‌রিস শিগগিরই দায়িত্ব ছাড়ছেন না, এমন‌টিই মত রাজ‌নৈ‌তিক বি‌শ্লেষক‌দের।

লন্ডনের মেয়র থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

‌ব্রে‌ক্সিট ইস্যু‌তে সা‌বেক ব্রি‌টিশ প্রধানমন্ত্রী ডে‌ভিড ক্যা‌মেরন যখন গণভো‌টের ডাক দি‌লেন, তখনই জনগ‌ণের সাম‌নে জাতীয় রাজনী‌তির ম‌ঞ্চে মোটা দা‌গে ভোল পাল্টা‌নো এক চ‌রি‌ত্র হি‌সে‌বে আভিভূর্ত হন ব‌রিস। গণভোটের পর ক্যা‌মেরন পদত্যাগ ক‌রেন। ওই সময়েই প্রধানমন্ত্রী হ‌তে আগ্রহী ছিলেন ক্যা‌মেরনের বাল্যবন্ধু ব‌রিস। এরপর থে‌রেসা মে’র সরকারকে নড়বড়ে ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের ধারাবা‌হিক পদত্যাগের ঘটনায় নেপথ্য কারিগর তিনিই ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

বরিসের সমালোচকদের অভিযোগ, মেয়র থাকাবস্থায় লন্ডন‌কে সাধারণ মানু‌ষের জন্য বসবাসের অসাধ্য করে তুলেছিলেন। ওই সময় এক সাক্ষাৎকা‌রে তিনি ১৭ বার ব‌লে‌ছি‌লেন, তি‌নি আর সংসদ সদস্য প‌দে দাঁড়া‌বেন না। যদিও এর একমাস পরই তি‌নি অক্সব্রিজ এলাকা থে‌কে এম‌পি নির্বাচন ক‌রে জয়ী হন।

গত প্রায় দুই যু‌গে ব‌রি‌সের মতো কর্তৃত্ব টি‌কি‌য়ে রাখতে ঘন ঘন অবস্থান ও ভোল পাল্টানো নেতা দে‌খে‌নি ব্রি‌টেন। বাহ্যত এই ‘প‌লি‌টিক্যাল এন্টার‌টেইনার’ সম‌য়ে সম‌য়ে হাসির খোরাক হলেও সুযোগ ক্যা‌রিশমা দেখা‌তে ওস্তাদ।

ব্রিটিশ রাজনী‌তিতে জীবিত নেতাদের মধ্যে একমাত্র বরিসের জনপ্রিয়তার পারদ ওঠা-নামা দুটোই করে।