নর্থ ডাকোটার পাইপলাইনবিরোধী আন্দোলনে সাবেক মার্কিন সেনারা

আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন কয়েক হাজার মার্কিন সেনাযুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটায় বিরাট বাজেটে নির্মিতেএকটি তেলের পাইপলাইনবিরোধী চলমান আন্দোলনে এবার যোগ দিয়েছেন দেশটির কয়েক হাজার সাবেক সেনা সদস্য। এ আন্দোলনের কর্মীরা স্ট্যান্ডিং রক এলাকায় শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় বিক্ষোভ করছেন। কর্তৃপক্ষ সোমবারের মধ্যে আন্দোলনস্থল ছাড়ার নির্দেশ জারি করেছে। সেখানে  পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন,শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মারধর করেছে পুলিশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই এই পাইপলাইন স্থাপনের বিরোধিতায় আন্দোলন করে আসছেন। কয়েক বিলিয়ন ডলারের এ পাইপলাইনটির একটি সেকশন ছাড়া প্রায় পুরো স্থাপন কাজ শেষ পর্যায়ে। একটি নদীর তীর ঘেঁষে এ পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে।

পরিবেশবাদীদের এ আন্দোলনে এবার কয়েক হাজার সাবেক মার্কিন সেনারা যোগ দিয়েছেন। সাবেক সেনাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক মার্কিন মেরিন সেনা ও বাল্টিমোর পুলিশ কর্মকর্তা মাইকেল উড জুনিয়র। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, যদি পুলিশ রাষ্ট্রীয় পরিচালিত এজেন্টে পরিণত হয়ে সম্মানের সঙ্গে যারা দেশকে সেবা দিয়েছেন সেই সব অহিংস সাবেক সেনাদের ওপর হামলা করে, তারা যদি আমাদের মারধর করে, তাহলে আমাদের দেশ কোথায় যাচ্ছে তার একটি সতর্ক সংকেত।

বরফ শীতল প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা

সাবেক সেনাদের এই দলটি ফেসবুকে একটি পেজ খুলেছে এ আন্দোলনের সমর্থনে। একই সঙ্গে তারা খাবার, যাতায়াত ও নতুন স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহের একটি ক্যাম্পেইনও শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে এ ক্যাম্পেইন থেকে প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার সংগৃহীত হয়েছে। তাদের পেজে একটি পোস্টে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে চলমান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আরও অন্তত ২ হাজার সাবেক সেনা যোগ দেবেন।

শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এই আন্দোলনে তারা কোনও ধরনের বিদ্বেষ, সহিংসতা ও বিচ্ছিন্নবাদী আচরণ সহ্য করবেন না। দেশের জন্য আমরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করছি।তাই আসুন তা ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মানের সঙ্গে করি।

অবশ্য তারা আন্দোলনকারীদের আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জাম নিয়ে আসার জন্য বলেছেন। বডি আর্মার, গ্যাস মাস্ক, ইয়ার প্লাগ ও শুটিং মাফলার নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। তারা সাউন্ড কামানের আশঙ্কা করছেন। তবে কোনও ধরনের মাদক ও অস্ত্র না আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা শূন্য ডিগ্রির নিচে প্রতিকূল আবহাওয়াতে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির চেয়ে আরও ৫ ডিগ্রি কমে যেতে পারে।

_92810459_f954cec8-d9b3-47aa-b111-53661db7a568

নর্থ ডাকোটার গভর্নর জ্যাক ডালরিম্পল বুধবার বলেছেন, পাইপলাইনের রুট পরিবর্তন করার সুযোগ সম্ভবত নাই। তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে কাজ করার চেষ্টা করবেন। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনস্থল থেকে সব বাধা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ আশা করছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আন্দোলনকারীরা নিজ থেকেই সরে যেতে বাধ্য হবে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ জোর করে সরিয়ে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে নর্থ ডাকোটা পুলিশ।

এদিকে, নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাইপলাইন স্থাপন কাজ শেষ করার পক্ষে নিজের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। পাইপলাইন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পিলিপস সিক্সটি সিক্স প্রতিষ্ঠানের এক-চতুর্থাংশ শেয়ারের মালিক টেক্সাসভিত্তিক এনার্জি ট্রান্সফার পার্টনারস। এ কোম্পানিতে ট্রাম্পের মালিকানা রয়েছে।

ট্রাম্পের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এ অবস্থান তার বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটা তার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বলেই সমর্থন জানিয়েছেন ট্রাম্প।

চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকেই সিউক্স ও অপর আদিবাসী আমেরিকানরা পাইপলাইনবিরোধী আন্দোলন করে আসছে। তাদের দাবি, এই পাইপলাইন একটি সমাধিক্ষেত্রের ওপর দিয়ে স্থাপন করা হচ্ছে। এ পাইপলাইন স্থাপিত হলে স্ট্যান্ডিং রক এলাকার পানির উৎস দূষিত হয়ে পড়বে। সূত্র: বিবিসি।

/এএ/