টেক কোম্পানিকে সিআইএ-র হ্যাকিং পদ্ধতি দেবে উইকিলিকস: অ্যাসাঞ্জ

nonameবিশ্বের বিভিন্ন সরকার ও কর্পোরেশনের গোপন নথি প্রকাশকারী বিকল্পধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাদের হাতে আসা সিআইএ-র হ্যাকিং পদ্ধতি টেক কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হবে। যাতে করে ওইসব কোম্পানি হ্যাকিং প্রতিরোধের নিজেদের প্রযুক্তি গড়ে তুলতে পারে। বৃহস্পতিবার লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে একটি এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অ্যাসাঞ্জ। দূতাবাস থেকে সরাসরি ভিডিও প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

স্মার্টফোন, আইফোন, টিভি, ডেস্কটপ ও ল্যাপটপে নজরদারি চালাতে সিআইএ-র ম্যালওয়ার ও প্রযুক্তিবিষয়ক ৮ হাজার তথ্য সম্প্রতি ফাঁস করেছে উইকিলিকস। এসব নথি ফাঁস করার দুইদিনের মাথায় এ ঘোষণা দিলেন অ্যাসাঞ্জ।

অ্যাসাঞ্জ বলেন, সিআইএ তাদের সাইবার অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সম্পূর্ণরূপে। এটা একটি ঐতিহাসিক কাজ। সিআইএ এসব অস্ত্র তৈরি করে এক জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখে কিন্তু এগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি।

অ্যাসাঞ্জ জানান, বেশ কয়েকটি টেক কোম্পানি এসব তথ্য পর্যালোচনার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। উইকিলিকস পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করেনি কারণ তারা চায় না বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক ও জনগণ, তাদের সূত্র এসব হ্যাকিং পদ্ধতির আক্রমণের শিকার হোক। তাই তারা অ্যাপল, গুগল ও স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানি এসব তথ্য দেবে সবার আগে।

অ্যাসাঞ্জ বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের সঙ্গে কাজ করার। এসব টেকনিক্যাল তথ্য পর্যালোচনা করে যাতে করে তারা নিজেদের প্রযুক্তির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠতে পারে।

অবশ্য অ্যাপল ও গুগল জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া হ্যাকিং প্রক্রিয়ার অনেকগুলো তারা ইতোমধ্যে ‘ফিক্স’ করে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, ৮ মার্চ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস ‘ভল্ট সেভেন ইয়ার জিরো’ শিরোনামে সিআইএ’র আট হাজার নথি ফাঁস করে। উইকিলিকসের দাবি,  তাদের এবারের ফাঁস করা তথ্যগুলোর কারণে বিশ্বব্যাপী নজরদারির পথপদ্ধতিতে সিআইএ পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

সিআইএ-র এসব নথি ফাঁসকারীর নাম প্রকাশ করেনি উইকিলিকস। তবে জানিয়েছে, ফাঁসকারী ব্যক্তি সিআইএ-র বর্তমান বা সাবেক টেক কর্মকর্তা হতে পারেন।

এই ফাঁস সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সিআইএ, এফবিআই এবং প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউস। তবে বুধবার সিআইএ-র এক মুখপাত্র বিবিসি-কে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখতে সন্ত্রাসী ও শত্রুদের বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে উইকিলিকসের ফাঁস জনগণের জন্য এক বড় উদ্বেগের কারণ। এসব ফাঁসে কেবল মার্কিন কর্মকর্তা ও তাদের কর্মসূচীই ব্যাহত হয় না। বরং তা আমাদের শত্রুদের জন্য হাতিয়ার। এসব তথ্য আমাদের জন্য ক্ষতিকর।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফাঁস হওয়া নথিগুলো উইকিলিকসের কাছে কিভাবে পৌঁছাল, তার তদন্ত করছেন কর্মকর্তারা। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ওই তথ্য ফাঁস সিআইএ-র ভেতর থেকেই করা হয়েছে নাকি বাইরে থেকে, তা নিয়েও চলছে তদন্ত।

ফাঁসকৃত এসব নথি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সিআইএ-র সেন্টার ফর সাইবার ইন্টেলিজেন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। এসব নথিকে নিজেদের ফাঁস করা সবচেয়ে বড় আকারের গোপন নথি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে উইকিলিকস। তাদের দাবি, প্রকাশিত নথিগুলো এ সম্পর্কিত ফাঁসের প্রথম কিস্তি। শিগগিরই আরও অনেক নথি প্রকাশিত হবে।
অ্যাসাঞ্জ আগেই জানিয়েছিলেন, এটা সিআইএ-র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নথি ফাঁসের ঘটনা। ইতোপূর্বে অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথির চেয়ে এটি আকারে অনেক বড়।  সূত্র: ইউএসএ টুডে, বিবিসি।

/এএ/