রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জোর দাবি জাতিসংঘে

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সবকিছু ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা প্রশ্নটি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান জোর দাবি তুলেছেন পৃথিবীর সবথেকে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতের। সংকট নিরসনে জাতিসংঘকে জোরালো পদক্ষেপের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার ইরান এবং তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম-প্রধান দেশ রাখাইনের সংকট উত্তোরণে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এই সংকট নিরসনে বেশকিছু বৈঠক করা হয়েছে। তবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া মিয়ানমারের প্রতিনিধি সু চির বক্তব্যেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন।

1057522014

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ gfআগস্ট রাতে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন করে দমন অভিযানে নামে। সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানে গত প্রায় এক মাসে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ এবং গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের অবসানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে‘বলিষ্ঠ ও দ্রুত’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বক্তব্যে পেন্স বলেন “এই সংকটের অবসান এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এই প্রয়োজনের সময় তাদের সহায়তা ও তাদের মাঝে আশা জাগাতে বলিষ্ঠ ও ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ নৃশংসতা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন পেন্স। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধএবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।

মাত্র তিন সপ্তাহে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মঙ্গলবারের ভাষণে রাখাইন অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের শাস্তির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন সু চি। সব পক্ষের নিরাপত্তার পাশাপাশি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সেখানকার রোহিঙ্গাদের নামোল্লেখ না করে ওই ডি-ফ্যাক্টো নেতা বলেন, ‘বেশ কিছু মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে- এ ধরনের খবর শুনে আমরা উদ্বিগ্ন।’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রাখাইন পর্যবেক্ষণে মিয়ানমার ভীত নয় বলে উল্লেখ করে  সুচি বলেন, আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তার সরকার কাজ করবে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশন চলাকালে মূল আলোচনার বাইরে  ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বুধবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে তুরস্কসহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে  রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিতের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন তারা। আলোচনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রাখাইন পরিস্থিতিকে সিরিয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। সেখানে চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে যুক্তরাজ্যের ভাইস প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন রাখাইনের সংকট উত্তোরণে বেশকিছু বৈঠক করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুয়েতেরেজ মিয়ানমারে চলমান সংকটকে এই বছরের শীর্ষতম সংকট বলে আখ্যা দেন।

তবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থায়ো রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। জাতিসংঘ ভাষণে রোহিঙ্গাদেরকে তিনি 'মুসলিম' হিসেবে তুলে ধরেন। সু চির মতো করেই দাবি করেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি অজ্ঞাত।