১২ শর্ত মেনে নিলে ইরানকে বন্ধু করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তার দেওয়া ১২ দফা শর্ত মেনে নিয়ে ‘স্বাভাবিক’ দেশের মতো আচরণ করলে ইরানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে যুক্তরাষ্ট্র।বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া ও শুক্রবার ‘ভয়েস অফ আমেরিকাতে’ প্রচারিত সাক্ষাৎকারটিতে পম্পেও আরও বলেছেন, ইরানের ইসলামি নেতৃত্বকে ‘স্বাভাবিক’ নেতাদের মতো চলতে হবে, যারা নিজের দেশের মানুষকে লুট করে না এবং জনগণের অর্থ সিরিয়া ও ইয়েমেনে করা হঠকারিতামূলক কার্যক্রমের জন্য অপব্যয় করে না। এর আগে ২১ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে দেওয়া ভাষণে ইরানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি শর্তের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে সেসব শর্তের বিষয়ে কথা বলার পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ইরানি ‘দুর্নীতিবাজ’ নেতাদের সম্পদের হিসেব প্রকাশ্যে আনার জন্য একটি আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও প্রত্যাশা করেন, ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’ ও ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক’ স্লোগান দেওয়া বন্ধ করবেন ইরানি নেতারা। image2804046x

১২ দফা শর্তে পম্পেও ইরানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। তবে এর সঙ্গে সহযোগী ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থও বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট। পম্পেওর প্রত্যাশা: পারমাণবিক শক্তির সামরিক ব্যবহার সংক্রান্ত সব পরিকল্পনার কথা ‘আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে’ (আইএইএ) জানাতে হবে। সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইচ্ছা ইরানকে চিরদিনের মতো ত্যাগ করতে হবে।

প্লুটোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে এবং প্লুটোনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করবে না করার শর্ত মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে ইরানকে ভারি পানির চুল্লিগুলোও বন্ধ করে দিতে হবে।

‘আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে’ (আইএইএ) ইরানের সবগুলো পারমাণবিক শক্তি সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় শর্তহীন প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিস্তার বন্ধ করতে হবে এবং কখনও পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি না করার শর্ত মেনে নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী ও বন্ধু রাষ্ট্রের আটক নাগরিকদের মুক্তি দিতে হবে।

হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন এবং ইসলামি জিহাদকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

ইরাকের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে হবে এবং শিয়া আধাসামরিক বাহিনীগুলোকে নিরস্ত্র করে তাদেরকে সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে।

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং ইয়েমেনের সঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে হবে।

সিরিয়া জুড়ে মোতায়েন থাকা ইরানের সব সেনাসদস্যকে ফিরিয়ে নিতে হবে।

তালেবানসহ আফগানিস্তানে থাকা অন্যান্য জঙ্গিদের প্রতি সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আল কায়েদা নেতাদের সহায়তা দেওয়া চলবে না।

বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাংদেহী পক্ষগুলোকে ইসলামি রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্পসের সঙ্গে যুক্ত কুদস বাহিনী যে সহায়তা দেয় তা বন্ধ করতে হবে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলকে ধ্বংস করার হুমকি দেওয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা, আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে চলাচল করা জাহাজগুলোকে হুমকি দেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক সাইবার হামলা বন্ধ করতে হবে।

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ভাষণে উল্লেখ করা এই ১২ দফা শর্তের বিষয়ে ‘ভয়েস অফ আমেরিকাকে’ দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও খোলাখুলি কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। তার ভাষ্য, ‘আমরা যদি ইরানি নেতাদের আচরণ পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে ইরানি জনগণের জন্য তা অনেক বড় সাফল্য বয়ে আনবে। আমরা আমেরিকানরা সেখানে বেড়াতে যাব। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তেমনই হবে যেমন অন্য বন্ধু ও সহযোগীদের সঙ্গে রয়েছে।’

ইসরায়েলের সঙ্গে শত্রুতামূলক সম্পর্ক ত্যাগের যে কথা পম্পেও তার ১২ দফায় বলেছিলেন সে প্রসঙ্গে তিনি ভিওএকে বলেছেন, ইরানি নেতাদের শুধু যে ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’ বলা বন্ধ করা উচিত তা নয়। তাদের ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক’ শ্লোগান দেওয়াও বন্ধ করা উচিত। ইরানি নেতাদের এসব বন্ধ করা উচিত কারণ সেগুলো তাদের দেশের জনগণের জন্য ভালো নয়।

ইরানি নেতাদের গোপন সম্পদের হিসেব ফাঁস করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন পাসের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন চেষ্টা করছে। তার ভাষ্য, ‘ইরানি জনগণের সত্য জানার অধিকার আছে। তাদের জ্যেষ্ঠ নেতারা পকেট ভারি করছে। ব্যবসার নামে তারা যা করে তা স্পষ্টতই চুরি। আমি তাদের এসব কুকীর্তি প্রকাশ্যে আনার চেষ্টাকে সমর্থন করব যাতে ইরানের জনগণ নিজেরাই বুঝতে পারে, এমন লোকজনকে তারা তাদের দেশের শাসক হিসেবে দেখতে চায় কি না।’ ভিওএ লিখেছে, ‘ইরানিয়ান লিডারশিপ অ্যাসেট ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট’ নামের একটি আইন পাসের প্রক্রিয়া চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। ওই আইনটি পাস হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রীকে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ জ্যেষ্ঠ ইরানি নেতাদের অর্থ সম্পদের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

পম্পেও জানিয়েছেন, ইরানের সরকার পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়। তিনি ইরানের প্রবাসী বিরোধী নেতাদেরও সে আশা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘আমারা চাই না তারা সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিক।’ তবে তারা যতদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে ততদিন পর্যন্ত তাদের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানানোর কথাও বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও।