ইয়েমেন যুদ্ধ

সৌদি আরবের প্রতি সমর্থন বন্ধে মুখোমুখি কংগ্রেস- ট্রাম্প

ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংশ্লিষ্টতা বন্ধ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কর্তৃত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কংগ্রেসের সর্বদলীয় সদস্যরা এটাকে সমর্থন করতে পারেন বলে এই উদ্যোগকে নজিরবিহীন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এখবর জানিয়েছে।

1_fotpnTXa-0wCvl68QjTAjA

২০১৭ সালের ডিসেম্বরেই মার্কিন সিনেটে ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের ক্ষমতাবিষয়ক আইন চালু করার প্রস্তাব পাস করেছে। তবে প্রতিনিধি পরিষদে এই উদ্যোগ আটকে যায় রিপাবলিকান নেতৃত্ব দ্বারা। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিয়ন্ত্রণে। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটকে যুক্তরাষ্ট্রের রিফুয়েলিং, গোয়েন্দা, স্পেশাল ফোর্সের অভিযান ও লজিস্টিক সহযোগিতার মতো সামরিক সহায়তা স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগ সফল হলে ট্রাম্পকে তার নির্বাহী কর্তৃত্বের সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে হবে অথবা ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে এই যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও ট্রাম্পের ভেটোকে খারিজ করতে উভয় কক্ষে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন যোগাড় করার সম্ভাবনা কম ডেমোক্র্যাটদের। তবু এতে করে সৌদি আরব ও জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ট্রাম্প ও কংগ্রেসের মধ্যকার বিরোধ আরও স্পষ্ট হবে।

চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেন এখন বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে উৎখাত করে রাজধানী সানার দখল নেয় হুথি বিদ্রোহীরা। রিয়াদে নির্বাসিত হাদিকে আবারও ক্ষমতায় বসাতে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কয়েকটি পশ্চিমা দেশের জোট। মার্কিন সমর্থনে সৌদি জোটের এই অভিযানে রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ হারালেও দেশের বিস্তৃত এলাকার দখল এখনও ধরে রেখেছে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা।

এই প্রস্তাবটি প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপন করেছেন রো খান্না। তিনি জানান, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্য চলমান শাটডাউনের কারণে তা পিছিয়ে যেতে পারে।

সিনেটে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে ৫৬-৪১ ভোটে। নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর এখন নতুন সিনেট দায়িত্ব নিয়েছে। আগে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছিলেন স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, রিপাবলিকান মাইক লি ও ডেমোক্র্যাট ক্রিস মার্ফি। প্রস্তাবটি আবারও তারাই উপস্থাপন করবেন। ডিসেম্বরে ৫১ জন সিনেটর প্রস্তাবটি সমর্থন করেছিলেন। আর এখন সিনেটে আরও দুজন ডেমোক্র্যাট সদস্য যুক্ত হয়েছেন।

সিনেটের ডেমোক্র্যাটিক এক কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, আমরা শাটডাউন অবসানের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি হোদাইদাহ ও অন্যান্য ইয়েমেনি বন্দর নিয়ে ডিসেম্বরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়,  ২২ মিলিয়ন ইয়েমেনির জন্য স্বাধীনভাবে ত্রাণ তৎপরতার সুযোগ সৃষ্টি এবং সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় সৌদি সরকার আরও স্বচ্ছ অবস্থান নেয় তাহলে এই প্রস্তাব থেমে যেতে পারে। কিন্তু প্রস্তাবটির সমর্থকরা বলছেন, প্রস্তাবটি পাস হওয়ার হুমকি থাকার কারণেই সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনি সরকার সুইডেনে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হলে প্রথমবারের যুদ্ধের ক্ষমতা আইনে কোনও বিদেশি সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্বকে খর্ব করবে।

এক সাক্ষাৎকারে খান্না দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, পরিষদ ও সিনেটে এই প্রস্তাব পাস হওয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্বকে কেউ-ই খাটো করে দেখতে পারে না। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাথিস কংগ্রেসের কাছ থেকে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সুইডেনের আলোচনায় অগ্রগতি ঘটানোর জন্য সৌদি আরবকে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

খান্না বলেন, সুইডেন থেকে আমরা জানতে পেরেছি সেখানে সবাই কংগ্রেসের পদক্ষেপ সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে। এই প্রস্তাব যদি পরিষদ ও সিনেটে পাস হয় তাহলে তা সৌদি আরব ও জোটকে বার্তা দেবে, যাতে করে তারা সামরিক আগ্রাসী মনোভাব ত্যাগ করে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এতে বন্দর চালু ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। তারা নিশ্চই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি চায় না।