ফেসবুককে নিয়ে আবারও তদন্ত, ব্যবহারকারীদের তথ্য বিক্রির অভিযোগ

ব্যবহারকারীদের তথ্য বিক্রির অভিযোগে ফেসবুকের বিষয়ে আরও একটি তদন্ত শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, সংশ্লিষ্ট বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ফেসবুকের তথ্য ‘শেয়ারের’ চুক্তি আইনানুগ কি না। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত মোবাইলফোনসহ অন্যান্য পণ্য তৈরি করে এমন অন্তত দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুইটিকে ফেসবুকের কাছ থেকে কেনা ব্যবহারকারীদের তথ্যের বিষয়ে নথি জমা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, আগে থেকেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে ফেডারেল ট্রেড কমিশন, ফেডারেল এক্সচেঞ্জ কমিশন ও মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত চলছে।2019-02-22T011612Z_1639553697_RC1C1BC37800_RTRMADP_3_USA-FACEBOOK-CHILDREN
গত বছর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হয়ে কেমব্রিজ অ্যানালাইটিক নামের প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেবার একজন গবেষককে ব্যবহারকারীদের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছিল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। কিন্তু ওই গবেষকের সূত্রে ব্যবহারকারীদের তথ্য চলে যায় কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকের কাছে। অভিযোগ ওঠে, ডানপন্থী পত্রিকা ব্রেইটবার্টের প্রধান ও পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান পরিকল্পনাবিদ স্টিভ ব্যানন  প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত। তিনি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করে ২০১৬ সালের নির্বাচন প্রভাবিত করেছেন। কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকে কাজ করা সাবেক একজন কর্মী এসব তথ্য ফাঁস করে দেন। পরবর্তীতে এর জেরে ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গকে কংগ্রেসে শুনানির জন্য ডেকে পাঠানো হয়।
নিউ ইয়র্কের একটি আদালত এবার বড় বড় প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের কাছ থেকে ব্যবহারকারীদের তথ্য কিনছে কি না বা কিনলে তার প্রকৃতি কেমন, তা জানাতে অন্তত দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এই দুইটি প্রতিষ্ঠানই শেষ নয়। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বিক্রি করে এমন প্রতিষ্ঠান ১৫০টিরও বেশি। এদের মধ্যে রয়েছে আমাজন, অ্যাপল, মাইক্রোসফট এবং সনির মতো জায়ান্ট। ফেসবুক দাবি করেছে, গত দুই বছরে তারা তথ্য বিক্রির সব চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বন্ধু তালিকা, সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যসহ আরও অনেক কিছু দেখতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব তথ্য তারা হাতে পেয়েছে ব্যবহারকারীদের কোনও সুনির্দিষ্ট অনুমতি ছাড়াই।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, শুধু যে নিউ ইয়র্কের আদালত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বিক্রির সংক্রান্ত নথি চেয়েছে তা নয়, বরং ‘ফেডারেল ট্রেড কমিশন’ (এফটিসি) ও ফেডারেল এক্সচেঞ্জ কমিশনও ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে। কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকের ঘটনা সামনে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফেসবুকের বিরুদ্ধে চলছে ‘প্রতারণার’ তদন্ত।
আসলে ঠিক কীভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য কিনে ব্যবহার করছে তা জানাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিন প্রায় প্রত্যেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর বন্ধুদের কে কোথায় আছে তা জানার সুযোগ পায়। আর এর জন্য ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি কোনও সুনির্দিষ্ট অনুমতি।  ব্যবহারকারীদের বন্ধু তালিকা থেকে আমাজন সংগ্রহ করে ফেলেছে তাদের সবার নাম-ঠিকানা। অন্যদিকে অ্যাপল ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি এমনভাবে বাস্তবায়ন করেছে যে, ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারেন না যে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার পক্ষে কাজ করা আন্দোলনকারীরা বলেছেন, এভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির মাধ্যমে ফেসবুক ফেডারেল ট্রেড কমিশনের সঙ্গে ২০১১ সালে হওয়া সমঝোতার শর্ত ভঙ্গ করেছে। তাছাড়া জাকারবার্গ যে বলেছিলেন ব্যবহারকারীদের তথ্য ডেভেলপারদের ছাড়া আর কারও কাছে দেবেন না, সেই ঘোষণারও খেলাপ হয়ে থাকতে পারে যদি ফেসবুকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়।