চীনা বাধার জবাবে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে: যুক্তরাষ্ট্র

পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্তি করার প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট এক মার্কিন কূটনীতিকের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্যরা সেখানে চীনকে প্রকাশ্যে তার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে আহ্বান জানাতে পারেন, যাতে চীনের অবস্থান বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়।

azhar-wt-696x392

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামা নামক স্থানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারায় দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ জন সদস্য। এর দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। এরপর ভারত পাকিস্তানকে যথাসম্ভব আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। বালাকোটে বিমান হামলার পাশাপাশি দেশটি অব্যাহত রাখে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। তার ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৩ মার্চ) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত হয় প্রস্তাবটি।

গত বুধবার (১৩ মার্চ) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মাসুদ আজহারকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ‘১২৬৭ আল কায়েদা স্যাংকশান কমিটির’ অধীনে আজহারকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য সদস্যদের সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের সবার সমর্থন না পেলে কোনও প্রস্তাব গৃহীত হয় না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের সমর্থনে উত্থাপিত প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়নি চীন। দেশটি উল্লেখ করেছে, উত্থাপিত প্রস্তাবটি গভীর মনোযোগের সঙ্গে বিশ্লেষণের জন্য আরও সময় প্রয়োজন।

চীন প্রস্তাবটির পক্ষে সমর্থন না দেওয়ার কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টা পরে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট একজন কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন, বেইজিংয়ের ‘উচিত নয় পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশের সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়া,’ যদি তারা আসলেই জঙ্গিবাদের দমন চায়।

চীনের বর্তমান অবস্থানের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা ‘বিকল্প পদক্ষেপ’ গ্রহণের কথা ভাবছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, নিরাপত্তা পরিষদের ‘উন্মুক্ত বিতর্কে’ নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে চীনের প্রতি আহ্বান জানবেন তারা। যেহেতু এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, সেহেতু বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হবে মাসুদ আজহারের বিষয়ে চীনের ভূমিকা।

উল্লেখ্য, গত দশ বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো জাতিসংঘে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব আনার পর চীনের বিরোধিতায় তা আটকে গেছে। মুম্বাই হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০০৯ সালে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব দেয় ভারত। ২০১৬ সালে পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলার পর আবারও জাতিসংঘের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটিতে তিন স্থায়ী সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তাকে নিষিদ্ধ করবার প্রস্তাব দেয় ভারত। ২০১৭ সালেও তিন স্থায়ী সদস্য দেশ আবারও একই ধরনের প্রস্তাব আনে। প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞা কমিটিতে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভারতের প্রস্তাব আটকে দেয় চীন।