৯/১১ হামলার দুই দশক: এখনও যে প্রশ্নের উত্তর নেই

মাকে ছাড়াই জীবনের ২০টি বছর পার করে দিয়েছেন ২১ বছরের প্যাট্রিসিয়া স্মিথ। মায়ের স্মৃতি তেমন একটা মনে করতে না পারলেও চেষ্টা করেছেন তার সম্পর্কে জানতে। আত্মীয়স্বজন, পারিবারিক বন্ধু এবং গুগল সার্চের মাধ্যমে মায়ের স্মৃতি খুঁজে বেড়ান তিনি। ৯/১১-এর হামলায় যাকে হারিয়েছেন স্মিথ। তবে তার গলায় এখনও সোনার হরফে ঝুলছে মায়ের নাম। মায়ের ওই নেকলেসটি আজও আগলে রেখেছেন তিনি।

এবিসি নিউজ লাইভে ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে জর্জ স্টিফানোপলোসের ‘৯/১১ টোয়েন্টি ইয়ারস লেটার: দ্য লংগেস্ট শ্যাডো’ নামের পাঁচ পর্বের একটি প্রামাণ্য সিরিজ। তাতে এভাবেই নিজের কথা তুলে ধরছেন স্মিথ।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পালিত হচ্ছে ১১ সেপ্টেম্বরের ওই হামলার ২০তম বার্ষিকী। ওই হামলার জের ধরে বিগত বছরগুলোতে দেশটিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কাউন্সেল ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আলবার্তো গঞ্জালেস। ন্যাশভিলের বেলমন্ট ইউনিভার্সিটি ল স্কুলের এই ডিন বলেন, ‘যখন আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৯/১১ নিয়ে কথা বলি, তখন আমি তাদের বোঝাই যে, এটি সত্যিই একটি জীবন পরিবর্তনকারী ঘটনা। এই ঘটনা আমেরিকান জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের ফোকাস বদলে দিয়েছে। এটি আজ আমেরিকানদের জীবনযাপনের ধরন বদলে দিয়েছে।’

আলবার্তো গঞ্জালেস বলেন, ‘আমরা স্পষ্টতই চেয়েছিলাম যে, আমেরিকানরা তাদের জীবন যথাসম্ভব স্বাভাবিকভাবেই কাটাক। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে, আমরা অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি দুনিয়ায় বাস করছি। এখানে এমন বহু লোকজন ও সংগঠন আছে আমাদের জীবনযাত্রা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে যাদের মনোভাব খুব ইতিবাচক নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তথ্য বলছে,  ৯/১১-এর ঘটনার সময় দেশটির বর্তমান বাসিন্দাদের মধ্যে ৭০ মিলিয়েনেরও বেশি মানুষের জন্মই হয়নি। প্যাট্রিসিয়া স্মিথের মতো অনেকেই তখন শিশু। মানুষের জীবন ধ্বংস এবং তার পরবর্তী রূপান্তর বোঝার মতো বয়স তখনও তাদের হয়নি।

সেদিনের ঘটনার কথা এখনও যাদের মনে আছে তাদের কেউ হয়তো গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা বলবেন। ওই হামলার জন্য আল কায়েদাকে দায়ী করে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাহলে কি ৯/১১-এর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দুই হাজার ৪০০-এরও বেশি মার্কিন সেনাকে জীবন দিতে হয়েছে? উঠছে এমন প্রশ্নও।

এত কিছুর পরও আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এখন ২০০১ সালের সেই শাসকগোষ্ঠী। সেই তালেবান সরকার যাদের উৎখাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে দেশটিতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আবারও সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাহলে দেশটিতে ৯/১১ পরবর্তী মার্কিন অভিযানের সাফল্য কতটা? এসব প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে, যদিও এর খুব সহজ কোনও উত্তর নেই।

সূত্র: এবিসি নিউজ।