৯/১১ ধ্বংসস্তূপে গড়ে ওঠা যে ‘নতুন পৃথিবী’ স্থায়ী হয়নি বেশিদিন

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকালের পর বদলে যায় বিশ্ব। যে ইরানে প্রতিদিন শোনা যেত আমেরিকার পতন হোক, সেখানে নিহত মার্কিনিদের স্মরণে মোমবাতি জ্বলে। রাশিয়ার প্রভাবিত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ প্রস্তুতি সহায়তার ঘোষণা দেন ভ্লাদিমির পুতিন। ‘ভয়ঙ্কর শাসক’ মুয়াম্মার গাদ্দাফি আমেরিকার পাশে দাঁড়ানোকে ‘মানবিক কর্তব্য’ আখ্যা দেন। আমেরিকার দীর্ঘ দিনের শত্রুরা মিত্র হয়ে উঠে এক কাতারে দাঁড়ায়। তবে এই বিরল বদল বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো নিজেদের সুনাম ও প্রভাব বিস্তারের সুবর্ণ সুযোগ পায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রায় এক দশক পর বিশ্বের এক কর্তৃত্ব হাতে তুলে নেওয়ার নৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ পায় যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু এসব সুবিধা শিগগিরই নষ্ট হয়ে যায়। সন্ত্রাস দমনে সামরিক ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মুসলিম দেশগুলোর অভিবাসী বিরোধী মনোভাব জোরালো হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষকে রক্ষার নামে ক্ষোভ, তিরস্কার আর স্বঘোষিত দেশপ্রেমের নামে নজরদারি জোরালো হয়ে ওঠে।

বিশ্বের অন্যান্য অংশেও এর প্রভাব পড়ে। ইউরোপে ডানপন্থা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। চীন ক্রমেই বৈশ্বিক ক্ষমতার চূড়ায় উঠতে থাকে।

পুনরায় বিশ্বাস স্থাপনে নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু তা সহজ নয়। তিনি যুদ্ধ শেষ করছেন। কিন্তু এর পরে কী?

২০০১ এ হামলার পর প্রতিশোধের রক্তের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রণীত বাইনারি অবস্থানে- ‘হয় আমাদের সঙ্গে নয়তো সন্ত্রাসবাদের পক্ষে’ বিভক্ত হয়ে পড়ে পুরো সমাজ। স্কুল বোর্ড, ফেসবুক পোস্ট আন্তর্জাতিক রাজনীতি সব জায়গাতেই বিভাজন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শত্রুর ধারণা বিবর্তিত হয়ে সেই তালিকায় ঢুকে পড়ে অভিবাসীরাও। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে দেশপ্রেম। আর এসব বিভাজনকে এক সুতোয় গেঁথে প্রেসিডেন্ট হয়ে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিশ্বজুড়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন শক্তির কারণে দুর্বল হয়েছে আল কায়েদা। ২০০৫ সালের পর পশ্চিমে নতুন কোনও হামলা চালাতে পারেনি তারা।

তবে সামরিকায়ন জোরালো হয়েছে। বড় থেকে শুরু করে ছোট শহরগুলোও এখন সন্ত্রাস মোকাবিলার নামে নিজস্ব সামরিক যান ও অস্ত্র রয়েছে। সরকারি অফিসগুলো হয়ে পড়েছে দুর্গ। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার বাড় বাড়ন্ত।

এপি অবলম্বনে।