ওষুধের গুদামঘরে আগুন, সিসি ক্যামেরা অকেজো থাকা প্রশ্নবিদ্ধ

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ২৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের গুদামঘরটিতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের প্রায় ৩৬ রকমের ওষুধ, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের ওষুধ, প্রয়োজনীয় জিনিস ও যন্ত্রপাতিসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

তবে মহাখালীতে এ ভবন ও সংলগ্ন কার্যালয়ে ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারপাশে দেয়ালঘেরা ভবনটিতে বাইরের কারও পক্ষে ঢোকা পুরোপুরি কঠিন। কারণ এটি সংরক্ষিত এলাকা। কিন্তু ভবনের একমাত্র সিসি ক্যামেরাটি গত কয়েক বছর ধরে নষ্ট। এ কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া মুশকিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পুড়ে যাওয়া গোডাউন পরিদর্শন করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল দিবগত রাত ১২টার কিছু সময় পরে মহাখালীতে সাততলা টেমোর মোড় এলাকায় অবস্থিত পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আওতাধীন জন্মনিয়ন্ত্রণের সব ধরনের ওষুধ রাখার পন্যাগারে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

তবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কারখানার ভেতরে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে আগুন জ্বলছে। থেমে থেমে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর ধোঁয়া এবং কারখানার ভেতরে গুড়ো কাচের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। সকাল থেকে সেখানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট।

কারখানায় গিয়ে জানা যায়, রাতে নিয়মিত পাহারার দায়িত্ব পালন করছিলেন চার নিরাপত্তারক্ষী গিয়াসউদ্দিন, সাহেব আলী, মোসলেম সিকদার এবং আনসার সদস্য রিপন। তবে এই চার নিরাপতা রক্ষীকে ভবন সংলগ্ন অফিস ভবনের দোতলায় রাখা হয়েছে বলে সবাই জানালেও তাদের সঙ্গে দেখা করা এবং কথা বলা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্যালয় এবং অফিস ভবনের এলাকাটুকু উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। প্রধান ফটকে নিয়োজিত থাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তারক্ষী। বাইরের কেউ সেখানে ঢুকতে পারে না। তবুও কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো তা রহস্য।

ইতোমধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পক্ষ থেকে অধিদফতরের তথ্য মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক ফেরদৌস আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে পরিচালক (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) ডা. মো. শরীফকে প্রধান করে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্মসচিব আব্দুল মালেককে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ফায়ার সার্ভিসে আগুনের সংবাদ পৌঁছেছে দেরিতে। সেটা ইচ্ছাকৃত নাকি ভুল হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা। তবে অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (ড্রাগ্স অ্যান্ড স্টোর্স) মো. হানিফুর রহমান বলেন, ‘গুদামের ভেতরে কেমিক্যাল, ওষুধ, শাড়ি-লুঙ্গিসহ সবকিছুতে দ্রুত আগুন ছড়ায়। এ কারণে অতি অল্প সময়ে আগুন পুরো গুদামে ছড়িয়ে পড়ে এবং আগুন নিভে যাওয়ার পরও ভেতরে ছোট ছোট আগুন লেগে ছিল এবং ধোঁয়া হচ্ছিল।’

ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (ড্রাগ্স অ্যান্ড স্টোর্স) জানান, এখানে নিরাপত্তা খুবই কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে সিসি ক্যামেরা প্রসঙ্গ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি দুই বছরের একটু বেশি সময় হলো। একটি সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা আমি যোগ দেওয়ার অনেক আগে থেকেই নষ্ট হয়ে আছে।’

একই কথা বলেন অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সরওয়ার। তিনি বলেন, ‘সিসি ক্যামেরাটি অনেক বছর ধরেই আউট অব অর্ডার। এতো সংরক্ষিত এলাকা, চারপাশে উঁচু দেয়াল দেওয়া, প্রধান ফটকে সার্বক্ষণিক জনবল থাকে এবং বাইরের কারও এখানে ঢোকার সুযোগ নেই, তবুও আগুনের ঘটনা ঘটলো।’

অধিদফতরের মহাপরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে আরও জানান, অধিদফতরের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি এবং ইনভেনটরি কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ পেয়েছেন তারা। তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং ইনভেনটরি কমিটি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতোটুকু তা নিয়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘একটি গোডাউন পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে। আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো।’

/জেএ/জেএইচ/

আরও পড়ুন-
তিন মাসের মজুদ আছে, সমস্যা হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী