স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিদেশে রোগী পাঠানোর সেন্টার

স্বাস্থ্য অধিদফতরউন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকেই ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যান। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগী পাঠানোর সেন্টারের মাধ্যমেও তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান।

দেশে এখন ঠিক কতগুলো সেন্টারের মাধ্যমে বিদেশে রোগী পাঠানো হয়, এর সঠিক কোনও তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই। এ ধরনের কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেরই এ কাজের কোনও অফিসও নেই। তারা অনলাইন বা ফেসবুকের মাধ্যমে কাজ সারেন। অনেক রোগী আবার ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে চিকিৎসা করান বিদেশে। ফলে জানাও যায় না ঠিক কতজন রোগী প্রতিবছর দেশের বাইরে যাচ্ছেন।

একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আসলে অজ্ঞতা থেকেই বিভিন্ন ভিসা সেন্টার বা বিদেশে রোগী পাঠানোর সেন্টারের মাধ্যমে অনেক রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। আসলে তারা সরাসরি হাসপাতালে ইমেইলে যোগাযোগ করেই যেতে পারতেন। না জানার কারণে তারা বিভিন্ন সেন্টারের মাধ্যমে যায়। এসব ক্ষেত্রে শুধু শুধু রোগীদের বাড়তি কিছু টাকা এসব প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয়।’

নাহিদা হেলথ কেয়ার সেন্টারের স্বত্বাধিকারী নাহিদা আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ২২ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এই কাজের শুরু। আমরা রোগীর পছন্দ অনুযায়ী কাজ করি। আমি প্রথমে ডা. দেবী শেঠীর কাজ শুরু করেছি। এখনও আমি শুধু ইন্ডিয়াতেই রোগী পাঠাই।’

রোগী আসলে দেশের বাইরে যাবে নাকি দেশে চিকিৎসা নেবেন— এটা রোগীর পছন্দ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ রোগীর পছন্দ। আমি বলি না যে আমার এখান থেকে ট্রিটমেন্ট করান, আবার বলি না যে আপনি ওখানে ট্রিটমেন্ট করান। যার যা পছন্দ তিনি সেটাই করেন।’

নাহিদা আলম বলেন, আমি যখন শুরু করি তখন বাংলাদেশের হেলথ সেক্টরগুলো খুব দুর্বল ছিল। এখন তো অনেক ভালো হয়েছে। আমি আসলে এজেন্ট না। আমি সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কাজটা করি। আগে আমি একাই কাজ করতাম। এখন কয়েকজন এমপ্লয়ি রেখেছি।’

১০০ ভাগ রোগী নিশ্চিত না হলে ভিসা প্রসেস করে দেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘যখন শুরু করেছিলাম তখন ট্রাভেল রেট ১০০ টাকা করে নিতাম। এতেই আমার অফিসের সব কাজ হয়ে যেতো। কিন্তু এখন দেখা যায়, শুধু কোনোমতে অফিসটা চালাতে পারি। যারা ১৫-২০ বছর ধরে আছে তাদের জন্যই হয়তো এখনও পর্যন্ত সেন্টারটা ধরে রেখেছি।’

সিঙ্গাপুরের ফেরার পার্ক হাসপাতালে কর্মরত মনোয়ারুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালে চাকরি করি। বাংলাদেশিরা এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইনে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সিঙ্গাপুরে আসেন। সাধারণত যেটা হয়, কোনও পুরনো রোগী থাকেন তিনি চিকিৎসককে চেনেন। তার মাধ্যমে নতুন রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যান। আমরা বাংলাদেশি পরিচিত কাউকে পেলে সেখানে সহায়তা করি।’ তিনি জানান, এ সংক্রান্ত ঢাকায় তাদের কোনও অফিস নেই।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত স্ত্রীকে দীর্ঘদিন দেশে চিকিৎসা করান রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শামসুল হুদা। চিকিৎসায় সন্তুষ্টি না আসায় স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাংককে যান। শামসুল হুদা বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। আমি ওদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করি। এটা কোনও জটিল প্রক্রিয়া না। খুবই সহজ। ওরা চিকিৎসার কাগজপত্রগুলো চেয়েছিল, ইমেইলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে ওরা দূতাবাসে ভিসার জন্য একটা চিঠি পাঠায়। এরপর আমরা ভিসা নিয়ে সেখানে যাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ডের ব্যাংককের ফিয়া থাই ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালে গেছি। এটি বিদেশি রোগীদের জন্য ভালো ট্রিটমেন্ট দেয়।’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার ডা. মো. জাহেদুল হক বসুনিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেসব সেন্টার থেকে রোগীকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পাঠানো হয় সে ব্যাপারে বিএমডিসি কনসার্ন না। আমরা এই ধরনের কোনও বিষয় নিয়ে ডিল করি না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে রোগী যাওয়ার ক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা করে—এই ধরনের সেন্টারগুলো আমাদের সঙ্গে যুক্ত না। অনেক সময় বিদেশে চিকিৎসা নিতে গেলে কেউ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকলে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তখন আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে অনুমতি দিই। তবে এ সংখ্যাটি খুব বেশি নয়।’