ঢামেকের পরীক্ষামূলক প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছে দুজনকে

1ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া প্লাজমা থেরাপি থেকে এখন পর্যন্ত দুইজনকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। তারা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্লাজমা বিষয়ক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান। পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমের আওতায় এখন পর্যন্ত ৮ জনের প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডা. এম এ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সংগৃহীত প্লাজমা থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডা. ওয়াহিদুজ্জামানকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। তারা ইমপ্রুভ করছেন বলে জানতে পেরেছি। আপাতত কার্যক্রম আগামী ২৭ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে, তারপর আবার শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে থেকে করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শুরু হয় প্লাজমা সংগ্রহ। রক্তের তরল হলুদাভ অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলা হয়। রক্তের মধ্যে তিন ধরনের কণিকা ছাড়া বাকি অংশই রক্তরস।  রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশই রক্তরস।

প্লাজমা থেরাপির বিষয়ে রেসপন্স কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক এ এ খান বলেন, মানুষ প্লাজমা নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছে বেশি, কিন্তু প্লাজমা দেওয়ার জন্য খুব বেশি মানুষ যোগাযোগ করছে না। তবে আমরা ভেবেছি হয়তো ঈদ বা রোজার জন্য মানুষ কম রেসপন্স করছে।

তবে প্লাজমা থেরাপির কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্লাজমা কালেকশন করার যে কিট সেটাও নেই আমাদের কাছে। এটা কিনতে হয়। এর দাম ১২ হাজার টাকা করে। আমাদের কাছে যেগুলো ছিল সেগুলো দিয়ে ইতোমধ্যেই প্লাজমা সংগ্রহের কাজ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর কী বলছে—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এম এ খান বলেন, অধিদফতর চুপচাপ, নো রেসপন্স। আমাদের চাহিদা দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনও কোনও ফিডব্যাক আমরা পাইনি। লজিস্টিক সব সাপোর্ট দিয়ে সহযোগিতা দিতে হবে, কিন্তু সেটা হচ্ছে না।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্লাজমা থেরাপিতে শতভাগ সাফল্য আসবে বা মৃত্যুরোধ করা যাবে না। তবে যেহেতু কোভিড-১৯ এর কোনও চিকিৎসা এখনও নেই আর প্লাজমা থেরাপির কোনও ক্ষতি নেই তাই পরীক্ষামূলক এটা দিতে সমস্যা নেই।

প্লাজমা থেরাপি কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এ ভাইরাস মোকাবিলা করে টিকে থাকতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাজমায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওই অ্যান্টিবডিই অসুস্থদের সারিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার হবে। এটা একেবারেই রক্তদানের প্রক্রিয়ার মতো।  কেবল এখানে ডোনারকে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হতে হবে এটুকুই পার্থক্য। করোনামুক্ত হওয়ার পর ১৪ দিন পর্যন্ত একজন ব্যক্তি প্লাজমা দিতে পারেন।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্লাজমা থেরাপির অনুমোদন দেওয়ার পর অধ্যাপক ডা. এম এ খান দেশে প্লাজমা থেরাপির উদ্যোগ নেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হলে ১২ এপ্রিল এ নিয়ে বৈঠক হয়। ১৮ এপ্রিল তাকে প্রধান করে চার সদস্যের টেকনিক্যাল সাব কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বাকি তিন সদস্য হলেন ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি।