‘ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি অসংগঠিত’

ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি যা প্রায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০০ সরকারি হাসপাতলের ভায়া সেন্টারে চালু আছে, তা অসংগঠিত, হাসপাতালকেন্দ্রিক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এখানে সরকারের উদ্যোগ জরুরি বলে জানিয়েছেন তারা।

আজ শনিবার (৯ জানুয়ারি) জরায়ুমুখ ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। তারা বলছেন, একে সমাজভিত্তিক সংগঠিত রূপ না দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের এর আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব। এর বাইরে সরকারি- বেসরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, এটা আশার কথা। তবে সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এখন সময়ের দাবী, যা হবে সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সম্পূর্ণ।

৫ম বারের মতো পালিত হচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস।  জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শনিবার ‘মার্চ ফর মাদার’ নামের মোর্চার উদ্যোগে এই দিবসটি পালিত হয়। এ ছাড়া পুরো জানুয়ারি মাস বিশ্বে জরায়ু মুখের ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসে উদযাপিত হয়।

এ বছর এ উপলক্ষে মাসব্যাপি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে যার উদ্বোধন হলো আজ শনিবার বিকাল ৩টায় জুম প্ল্যাটফর্মে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘ এইচপিভি নামের দুষ্ট ভাইরাসকে জানুন’ শিরোনামে। দেশের খ্যাতনামা স্ত্রীরোগ, ক্যান্সার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই আলোচনায় অংশ নেন।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টি এ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জননীর জন্য পদযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে এইচপিভি ভাইরাস ও এর সাথে জরায়ুমুখসহ অন্যান্য ক্যান্সার ও নন-ক্যান্সার স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ  এর গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা, জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রোকেয়া আনোয়ার ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অনকোলজি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাশেফা খাতুন।

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার- আইএআরসি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই জরায়ুমুখের ক্যান্সারের অবস্থান।

প্রতি বছর এই ক্যান্সারে ৮,০৬৮ জন নারী নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, নারী ক্যান্সার রোগীর প্রায় ১২ শতাংশ। মারা যান ৫,২১৪ জন।

প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য জরুরি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)  ভ্যাকসিন দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে, অন্যটির আমদানি বেশকিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ কামনা করছি। সরকার আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা (গ্যাভি) এর সহযোগিতায় গাজীপুর জেলার তেত্রিশশ’ কিশোরীকে বিনামূল্যে এই ভ্যাক্সিন প্রদান করেছেন। এই পাইলট প্রজেক্টটির মূল্যায়নের পর, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সম্প্রসারিত করার কথা – এ বিষয়ে অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।

সভায় বক্তারা মত প্রকাশ করেন, কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, চিকিৎসকসমাজ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যান্য অংশীজন, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে সমন্বিত প্রচেষ্টায় ক্যান্সার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি সম্ভব।