দেশে প্রাথমিকভাবে বহুল প্রতিক্ষীত করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। গতকাল ( ২৭ জানুয়ারি) প্রথম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড এর প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু হয়। তারপর আজ বৃহস্পতিবার ( ২৮ জানুয়ারি) কুর্মিটোলার সঙ্গে আরও চারটি হাসপাতাল ( ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে টিকা দেওয়া শুরু হয়।
করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে মানুষের মনে আশঙ্কা, দ্বিধা ও সংকোচ রয়েছে। রয়েছে চিকিৎসকদের মনেও। আর সে সংকোট, দ্বিধা ও আশঙ্কা দূর করতে এগিয়ে এলেন দুই চিকিৎসক দম্পতি।
তারা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। অপর দম্পতি হলেন কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান ও স্ত্রী রোগ এবং প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন ভবনে এই টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। সেখানে প্রথম টিকা নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তারপর থেকেই একে একে চিকিৎসকরা টিকা নিতে নাম নিবন্ধন করে টিকা নিতে শুরু করেন।
বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসক দম্পতি হিসেবে আমরা এই টিকা নিচ্ছি, এটা আরও বেশি আনন্দের আমাদের জন্য।
টিকা নেবার পর কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডা. মোস্তফা জামান বলেন, কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করছি না, আমরা দুজনই সুস্থ আছি।
৩০ মিনিট এখানে পর্যবেক্ষণ কক্ষে অবস্থান করার পর হাসপাতালের রুটিন কাজে ফেরত যাব। তিনি বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে এই টিকা দিতে পেরেছি।
সাধারণ মানুষের দ্বিধা এবং উৎকণ্ঠাটা বুঝি, কিন্তু এটা একেবারেই অমূলক-বলেন ডা. নুজহাত চৌধুরী। টিকা নেবার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে সরকার দেশে এনেছেন, তারা নিশ্চয়ই সব বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তাই আমাদের সরকারের উপর আরও বেশি আস্থা থাকা প্রয়োজন এবং আমি নিজে দিয়েছি। আমি সবাইকে নিশ্চিত করতে চাই, এতে কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে না।
স্বামী স্ত্রী দুজনই চিকিৎসক হিসেবে আগে টিকা নেবার সুযোগ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যদি সুযোগ পাই যখন সাধারণ মানুষ সবাই পাবেন তখন তিনি পরিবারের অন্যদেরকেও এই টিকা দেবেন। সবার দেওয়া উচিত।
ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান, আমাদের উচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন কমিটির সদস্য ছিলেন অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব। যে কমিটি এই টিকা অনুমোদন দিতে সুপারিশ করেছে। তিনি বলেন, আমি এই কমিটির একজন সদস্য। কমিটি নয় হাজার পৃষ্ঠার বৈজ্ঞানিক সব ডকুমেন্টস পরীক্ষা করে কোভিশিল্ডকে দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছি। আমি শতভাগ নিশ্চিত যে, এটা একটি কার্যকর ও নিরাপদ টিকা।
তিনি বলেন, আমি নিজে টিকা নিলাম। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চিকিৎসকের চেয়ে আমরা চিকিৎসক হিসেবে টিকা দিতে পারছি।
টিকা নেবার বিষয়ে কারও কোনও দ্বিধা না করার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বরং সবার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এবং সবার নির্ধারিত সময়ে একটি ডোজও নষ্ট না করে সবার টিকা নেওয়া উচিত।