প্রতিনিয়ত হটস্পট বদলাচ্ছে করোনা, এরপর কোথায়?

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে সারাদেশেই। তবে প্রতিনিয়ত সংক্রমণের এলাকা বদলাচ্ছে। নতুন আক্রান্ত শনাক্তের হিসাব বলছে, সংক্রমণের শীর্ষে এখন খুলনা। ঢাকায় সংক্রমণ মোটামুটি একইরকম থাকছে। তবে এরপর কোন এলাকায় সংক্রমণ বাড়বে তা নিয়ে আগাম কোনও বার্তা দেওয়ার সুযোগ নেই।

দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা মাঝে কিছু সময় স্তিমিত হলেও আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এর কারণে প্রতিদিনই লকডাউন করা জেলার সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই দিনে আরও পাঁচ জেলা এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার লকডাউন করা হয় গোপালগঞ্জ, নীলফামারী ও ময়মনসিংহ জেলা। আর বুধবার লকডাউনের তালিকায় যুক্ত হয় শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও নওগাঁ জেলা। সব মিলিয়ে ৬৪টি জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৬টির বেশি জেলা লকডাউন করা হয়েছে।

সর্বশেষ নাটোর ও সিংড়া পৌরসভা এলাকায় চলমান কঠোর লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু আন্তঃজেলা চলাচল অব্যাহত আছে সেহেতু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর কোন এলাকা হটস্পট হয়ে উঠবে তা বলা সম্ভব না।

উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৫০ জন। আর ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩১৯ জন। মঙ্গলবার (১৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ১৩ হাজার ২২২ জনের এবং শনাক্ত ৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৯১ জন। আর ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২৪৩ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত চার দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেটে সংক্রমণ বাড়তির দিকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুলনায় ৪০ দশমিক ৮, যা গতকাল ছিল ৩৮ দশমিক ৭। রংপুরে সোমবার ২৯ শতাংশ সংক্রমণের হার ছিল, মঙ্গলবার তা ৩০ দশমিক ৮ পৌঁছেছে। সিলেটে সোমবার ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ সংক্রমণ থাকলেও মঙ্গলবার তা বেড়ে ১৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে ঢাকা ও রাজশাহীতে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। সোমবার ঢাকায় ৯ শতাংশ সংক্রমণ ছিল, মঙ্গলবারে সেটি ৭ দশমিক ৫-এ নেমেছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, এক দুই দিনের সংখ্যা দিয়ে সংক্রমণ কমেছে বলার সুযোগ নেই। তবে সংক্রমণ যে বাড়ছে তা দেখা যাচ্ছে।

নাটোর জেলায় করোনার সংক্রমণ এখনও ঊর্ধ্বমুখী। প্রশাসন জরুরি সভায় বলেছে, জেলায় মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। সভায় চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং ১৫ জুন পর্যন্ত জারি করা কঠোর লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ২২ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে মাগুরায় করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা শহর ও মহম্মদপুর উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। প্রতিনিয়ত জেলাগুলো থেকে এধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে জেলায় জেলায় আলাদা করে লকডাউন দেওয়া হবে। এরপর থেকে যেসব জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে সেসব জেলাকে আইসোলেটেড করে রাখা হচ্ছে।

কিন্তু তারপরেও যাতায়াত আটকে রাখা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ)-এর সভাপতি ইকবাল আর্সলান বলেন, সংক্রমণের এখনকার যে বৈশিষ্ট্য তাতে করে ঘন ঘন হটস্পট বদলাচ্ছে এবং জেলাগুলোর মধ্যে যাতায়াত বন্ধ করতে না পারার কারণে এটি ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এখন বেশিরভাগ জেলায় সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগামী। যদি কোথাও লকডাউনের কারণে নিয়ন্ত্রণে আসলেও ১৪ দিন পার হওয়ার আগে হার নিম্নমুখী বলার সুযোগ নেই। এখন সংক্রমিত জেলাগুলোকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।