‘রোগীর পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে’

দেশে আবারও বেড়েছে রোগীর নিজ পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয়। একজন রোগীকে চিকিৎসা নিতে নিজ পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬৮ দশমিক ৫০ ভাগ অর্থ। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

রবিবার (২১ নভেম্বর) হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে ‘পাথওয়েজ টু রিডিউজ হাউসহোল্ড আউট অব পকেট এক্সপেনডিচার' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, রোগীকে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হয় ওষুধ খাতে, অর্থাৎ ৬৪ ভাগ। এরপর হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ২৩ ভাগ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যয় হয় ৮ ভাগ অর্থ।

আর নিজ পকেট থেকে ব্যয় বাড়ার কারণে ১৬ দশমিক ৪ ভাগ রোগী প্রয়োজন থাকলেও চিকিৎসা নিতে পারেন না। ২০১২ সালে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় ছিল ৬৪ ভাগ। ২০৩২ সাল নাগাদ এই ব্যয় ৩২ ভাগে নামিয়ে আনতে কৌশলপত্র নেওয়া হলেও তা দিনে দিনে বাড়ছেই। রোগীর ব্যয় কমাতে ‘ই-হেলথ’ চালুর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সমন্বিত সেবা চালু, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা বাড়ানো ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করাসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আউট অব পকেট বেড়েছে। এর মধ্যে ওষুধের খরচ সবচেয়ে বেশি। ওষুধের খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে সার্ভিস কস্ট বেশি। কেন আউট অব পকেট বাড়ে— নন কমিউনিকেবল ডিজিজের কারণেও খরচ বাড়ছে। কারণ, এগুলো লাইভ লং ডিজিজ। সারা জীবন ওষুধ খেতে হয় তাই খরচ বাড়ছে। অপ্রয়োজনে বেশি অ্যান্টবায়োটিক খায়। অপ্রয়োজনে টেস্ট করার কারণে ওপিপি বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের বলছি, অপ্রয়োজনে যেন টেস্ট না দেন। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ায় খরচ বাড়ছে।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘ক্যান্সার, হার্টের চিকিৎসা আরও উন্নত হওয়া দরকার। আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল হচ্ছে। সেগুলো হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া কমবে। প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। তাদের ফি সহনশীল পর্যায়ে রাখা যায় কিনা, সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। রিসোর্সে যেমন যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার ও কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করছে, ফলে খরচ কমবে। যে কারণে রোগ হলে স্বাস্থ্যের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। সুস্থ থাকলে খরচ কম হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারলে অসুখ কম হবে। চিকিৎসার প্রয়োজন কম হবে। তখন ওপিপি কমে যাবে। প্রত্যেককে বছরে চেকআপ করতে হবে। তাহলে আগে রোগ নির্ণয় হলে অল্প খরচে সুস্থ হবে। এই কালচার এখনও তৈরি হয়নি, সেটি করতে হবে। ওষুধ ও টেস্ট ইথিক্যাল হতে হবে। আমাদের বাজেট অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। জিডিপির ২.৪% হেলথে ব্যয় করে। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির অংশ বাড়ানো প্রয়োজন। করোনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট ছিল। টেস্ট ও চিকিৎসায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। করোনায় কেউ দেশের বাইরে যাননি। কোভিড নন কোভিড সব ট্রিটমেন্ট দেশে নিয়েছেন। এতে প্রমাণ হয়েছে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।’