কলেরার টিকা কার্যক্রম শুরু

দেশের সবচেয়ে বড় কলেরা টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ঢাকার পাঁচটি এলাকায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। রবিবার (২৬ জুন) মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বির অডিটোরিয়ামে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম,  আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফেরদৌসী কাদরী এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আইসিডিডিআর,বি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-সহ অন্যান্য দেশি ও বিদেশি সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানে ড. ফেরদৌসী কাদরী জানান, বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে মে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর, বছরে এই দুই বার তীব্র ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এবছর ঢাকায় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগীর বসবাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, সবুজবাগ, মোহাম্মদপুর এবং মিরপুর এলাকায়।

তিনি আরও জানান, আইসিজি প্রায় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা প্রদানে সম্মত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহায়তায় আইসিডিডিআর,বি ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত কলেরার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবে। এই কর্মসূচিতে আরও সহায়তা করছে জাতীয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও এমএসএফ। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি-র আর্থিক সহায়তায় এই টিকাদান উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে।।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে সব ডায়রিয়া কিন্তু কলেরা না। কলেরা একসময় মৃত্যুর অনেক বড় কারণ ছিল। কিন্তু এখন কলেরা নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের উপকূলীয় এলাকায় ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করেছি। আমরা করোনার মধ্যেই ঢাকার কয়েকটি এলাকায় কলেরার ভ্যাকসিন দিতে শুরু করেছিলাম কিন্তু করোনার কাজের জন্য আমরা আর দিতে পারিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে মুখে খাওয়ার টিকা দেবো। এই কার্যক্রম ছয়দিন ৭০০টি কেন্দ্রে চলবে। আমাদের দেশে ডায়রিয়া এবং কলেরা বিপজ্জনক রোগ ছিল। মানুষ ভয় পেত কারণ হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন তেমন মৃত্যু নেই। এর পেছনে আমাদের সরকারের অনেক অবদান আছে, আইসিডিডিআর,বির অবদান আছে।

আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রথম ডোজ কলেরা টিকাদান কর্মসূচি চলবে। যাত্রাবাড়ীর প্রায় ৫ লাখ, সবুজবাগের প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার, দক্ষিণখানের প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার, মিরপুরের প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার এবং মোহাম্মদপুরের প্রায় ৪ লাখ অধিবাসীকে কলেরার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রায় ৭০০টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতি এক হাজার বাড়ির জন্য একটি টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইপিআই কর্মসূচিতে ব্যবহৃত টিকাদান কেন্দ্র, সূর্যের হাসি ক্লিনিক, রয়েছে।