‘ডায়বেটিস আক্রান্তদের বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা দরকার'

ডায়বেটিস আক্রান্তদের বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা দরকার বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব বিশ্ব রেটিনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তারা এ পরামর্শ দেন।  ‘রেটিনা সম্বন্ধে জানুন, দৃষ্টি সুরক্ষিত রাখুন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ব রেটিনা দিবস পালিত হয়েছে। রবিবার  (২৫ সেপ্টেম্বর)  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)  দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটি একটি শোভাযাত্রা, একটি সেমিনার ও  রেটিনা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা আয়োজন করে।

শোভাযাত্রাটি বি-ব্লক থেকে শুরু হয়ে গোলচত্বর, বট তলা প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে উন্মুক্ত আলোচনা ও একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বলা হয়,  চোখের ভেতরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেটিনা। বিভিন্ন রকম শারীরিক ও চোখের সমস্যায় রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে একজন ব্যক্তি আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে রেটিনার সমস্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ নিয়ে মানুষের সচেতনতা কম। নানা রকম শারীরিক রোগ ও চোখের সমস্যায় রেটিনা আক্রান্ত হয়। ফলে একজন ব্যক্তি একেবারেই অন্ধ হয়ে যেতে পারে।  ডায়াবেটিস আমাদের দেশে এখন মহামারি রূপে আবির্ভূত হয়েছে। ডায়াবেটিস চোখের সব অংশেরই তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় অন্ধত্বের সামগ্রিক কারণের মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জন্য অন্ধত্ব বরণ করে শতকরা ১২ দশমিক ৫ ভাগ। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী এই একই সমস্যায় ভুগতে পারেন। এক সমীক্ষায় দেখা যায়,  ১৫ বৎসর বা আরও অধিককাল ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের ভেতরে প্রায় ২ শতাংশ মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। আরও ১০ শতাংশের দৃষ্টিশক্তির গুরুতর অবনতি ঘটে। ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকা খুবই স্বাভাবিক।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ অপরিণত। অপরিণত শিশুর রেটিনা স্বাভাবিকভাবেই অপরিণত থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে সেই রেটিনা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণতা পায়। ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা সমস্যা। শতকরা এই ৩০ ভাগ শিশুকে খুঁজে বের করতে দরকার চক্ষু বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা (স্ক্রিনিং)। এই রোগের চিকিৎসা আছে। লেজার করা হয়, চোখের ভেতর ইনজেকশনও দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে যদি এই রোগ ধরা যায়, তাহলে শিশুর দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব। রেটিনায় রোগ প্রতিরোধ করার  জন্য  ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে, একই সঙ্গে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। বয়স ৬০ এর ওপরে হলে বছরে একবার ম্যাকুলা বিষয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করলে অবশ্যই সঠিক সময়ে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির মহাসচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও গবেষণা) অধ্যাপক জাহিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অফ অফথালমোলজির সভাপতি অধ্যাপক আভা হোসেন এবং বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ সাঈদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. জিয়াউল আহসান।