বিমানবন্দরে মশা তাড়াতে প্রাকৃতিক পদ্ধতি

সারা বছর যেমন তেমন, কিন্তু নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে মশার উৎপাতে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে পড়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নানা পদক্ষেপ নিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। এবার আগে থেকেই মশা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগের বাইরেও মশা তাড়াতে প্রাকৃতিক পদ্ধতির অনুসরণ করা হচ্ছে।

বছর জুড়েই প্রতিদিন সকালে লার্ভিসাইড (মশার লার্ভা ধ্বংসের ওষুধ) স্প্রে করা হয় বিমানবন্দরে। বিকাল থেকে মেলাথিয়ান, ল্যাম্বাডা সাইহলোথ্রিন (রীভা) ২.৫ ইসি এর মাধ্যমে ইনসেক্টিসাইড স্প্রে ও ফগিং করা হয়। তবে আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার না থাকায় বিমানবন্দরে ওষুধ দিয়েও সুফল মেলেনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় দেশের প্রধান বিমানবন্দরে মশার উৎপাত ছিল অসহনীয়।

এবার কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরোশনের গাইড লাইন ও কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাকৃতিক পদ্ধতিও অনুসরণ করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরের জলাশয়গুলোতে ছাড়া হয়েছে গাপ্পি মাছ। বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় গাঁদা ফুল ও তুলসি গাছ লাগানো হয়েছে বিগত কয়েক মাস ধরে।এছাড়া টার্মিনালে প্রবেশের গেটগুলোতে সন্ধ্যায় ধুপ জ্বালানো হয়। গেটগুলোতে বসানো আছে মশা মরার যন্ত্র। বিমানবন্দরের আশেপাশের এলাকার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে করা হচ্ছে ঝোপ, জলাশয় পরিষ্কারের কাজ।ডেঙ্গু মশা

কীটতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, পানিতে প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মশা। মশার জীবনচক্র চারটি পর্যায়ে মধ্যে তিন ধাপই কাটে জলাশয় কিংবা জলাশয়ের কাছাকাছি। ডিম, শূক, মুককীট সময় পার করে পূর্ণাঙ্গ মশা হয়ে উঠেই চারদিকে উৎপাত শুরু করে তারা। ফলে জলাশয়ে মশার প্রজনন প্রক্রিয়া বন্ধ করা গেলে উৎপাত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। গাপ্পি মাছ আকারে ছোট, দাম কম।  এই মাছ মশা,  ডিম, শূক, মুককীট খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মশার প্রজনন হয় এমন জলাশয়ে গাপ্পি মাছ চাষ করলে দ্রুত সুফল মিলবে। অন্যদিকে কিছু গাছ আছে সেসব গাছের ঘ্রাণে মশা থাকে না। গাঁদা ফুল, তুলসী, পুদিনা, ল্যাভেন্ডার জাতীয় গাছ মশা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

মশার প্রজননকে প্রতিহত করার পরামর্শ দিয়েছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় উড়ে আসা মশা মারার চেয়ে মশার বংশবিস্তার রোধ জরুরি। মশার বংশবিস্তার রোধ করা গেলে উপদ্রব কমবে।  কোনও এলাকায় যদি মশার উৎপাত বেশি হলে, তাহলে বুঝতে হবে  ২০০-৩০০ মিটারের মধ্যেই মশার বসবাসের জায়গা আছে। আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সব কার্যক্রম সিডিসি এবং ডিএনসিসি নির্দেশিকা অনুযায়ী করা হচ্ছে। এবার নতুন করে জলাশয়গুলোতে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। মশা তাড়াতে গাঁদা, তুলসি গাছ লাগানো হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান আছে। এর বাইরেও আগের মতোই মশা প্রতিরোধক স্প্রে নিয়মিত করা হয়।