ডেঙ্গু রোধে নতুন নির্দেশনা নেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, নেই তৎপরতাও

ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও তৎপরতা নেই। তবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধে সচেতনতা বাড়াতে বিগত বছরগুলোর মতো তৎপরতা নেই। শিক্ষার্থীদের সচেতন করার পাশাপাশি মশা নিধনেরও ব্যবস্থা নেই। অপরদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনের কোনও কার্যক্রমও দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও জবাব দেননি।

চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আগের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগেই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হতো। কিন্তু প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পরও চলতি বছর কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কোনও নির্দেশনা দেয়নি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরও।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, এ বছর নতুন করে কোনও নির্দেশনা পাইনি। ছুটির পর সোমবার (১০ অক্টোবর) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। তার আগেই গত দুদিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। আমরা আগের বছরের নির্দেশনা অনুযায়ী ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।

ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধে গত বছর ২৮ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত আদেশ জারি করা হয়। এরপর গত বছর ১ আগস্ট আরেক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর আবার ১৩ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত বছরের ১ আগস্টের নির্দেশনা:

১. দফতর, সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন এবং আশপাশের খোলা জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২. দফতর, সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন, খোলা জায়গা, মাঠ, ফুলের টব, পানির পাম্প বা পানির জমে এরকম পাত্র, ফ্রিজ বা পানি জমার ট্রে, পানির ট্যাপের আশপাশের জায়গা, বাথরুম, বাথরুমের কমোড, রেজ, নির্মাণাধীন ভবন, লিফট, সিঁড়ি, পরিত্যক্ত বস্তু ইত্যাদি এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলে যাতে দুই দিনের বেশি সময় পানি না জমতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. শিক্ষকরা অনলাইন/ভার্চুয়াল ক্লাসে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের করোনাসহ ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অনুরোধ জানাবেন।

৪. সব দফতর, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা ডেঙ্গু বিস্তার রোধে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবেন।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বরের নির্দেশনা:

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্ভব হলে ছাত্রদের ফুলহাতা শার্ট, ফুলপ্যান্ট; ছাত্রীদের ফুলহাতা জামা, সালোয়ার পরে আসা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে সার্বিক সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আদেশ যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং কাজে সম্পৃক্ত সব কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গত বছরের নির্দেশনা:

১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর আশপাশে যেসব জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমার আশঙ্কা থাকে সেসব জায়গা চিহ্নিত করে একদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। পানি জমার সম্ভাব্য স্থান প্রতিষ্ঠানের ছাদ, নির্মাণাধীন ভবন, ফুলের টব, বাগান, নালা, পানির ট্যাপের আশপাশের এলাকা, পানির পাম্প, পানির বদনা, হাইকমোড, আইসক্রিম বক্স, প্লাস্টিক বক্স, ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা ও টায়ার ইত্যাদি।

২. অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উল্টে রাখতে হবে যাতে পানি না জমে।

৩. হাইকমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ রাখতে হবে, লো-কমোডের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা বা অন্য কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে হবে।

৪. কোনও জায়গায় জমা পানি থাকলে লার্ভিসাইড স্প্রে করতে হবে অথবা পানি নিষ্কাশন করতে হবে।

৫. দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

৬. ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন/পরিষদের সঙ্গে সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৭. ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।