ঢামেকে ৩ মাসে মশক নিধন ওষুধ ছিটাতে দেখেনি কেউ

ঢাকা মেডিক্যালের আনাচে-কানাচে মশার উৎপত্তিস্থল লক্ষ করা যায়। কোনায় পলিব্যাগ বিছানো, গত সপ্তাহের বৃষ্টির পানি রয়ে যায় দিনের পর দিন। মশার উপদ্রবে দিনের বেলাও অনেক রোগী মশারি টানায়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের বাধ্যতামূলক মশারির নিচে রাখার কথা বলা হলেও কোনোভাবেই সেটা নিশ্চিত করা যায়নি। সব মিলিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল এলাকায় ডেঙ্গুবাহিত মশা নিয়ে বাড়তি কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এদিকে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলছেন, ঢামেক হাসপাতালে মশার উৎপত্তিস্থল আছে, তবে এডিস মশা  নয়।

সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মশারি, ওয়ার্ড ও চিকিৎসকদের কক্ষগুলোতে ছিটানোর জন্য রয়েছে অ্যারোসল ও ফিনিস। কিন্তু রোগীদের স্বজনদের অভিযোগ, আমরা এতদিন ধরে আছি, মশা-মাছি-তেলাপোকার উপদ্রব রয়েছে। কখনও দেখিনি ওষুধ দিতে। তারা আরও বলেন, নিচতলায় জানালার পাশে আছি, দেখিনি সিটি করপোরেশন বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনও ব্যবস্থা নিতে। তবে মশার উপদ্রব আছে।

ঢামেকের ক্যাজুয়ালিটি ব্লকের নিউরোসার্জারি বিভাগের নিচতলায় একশ নম্বর ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ সঞ্জয় সরকার জানিয়েছেন, অ্যারোসল সাপ্লাই আছে। আমরা রোগীদের জন্য চাহিদা জানালেও স্টোর থেকে দেওয়া হয় না। তবে চিকিৎসকদের জন্য চাহিদা জানালে একটি দেওয়া হয়, তাও মাসে একটা।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার  ডা. সায়েদউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ার্ডগুলো খোলামেলা থাকায়, সেখানে অ্যারোসল দেওয়া হয় না। তবে চিকিৎসকদের জন্য রুমগুলো বদ্ধ, তাই সেখানে দেওয়া হয়। মশার তেমন  উৎপত্তিস্থল নেই, তবে পোকামাকড় আছে। এগুলো নিধন করার জন্য লিকুইড ফিনিস ও ফিনাল সাপ্লাই রয়েছে। ওয়ার্ডগুলো থেকে চাহিদা জানালে আমরা দিয়ে থাকি। তিনি আরও বলেন, সামনে পেস্ট কন্ট্রোল করা হবে, সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি হয়ে গেছে, টেন্ডারের মাধ্যমে বছরভিত্তিক এ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। যা সোহরাওয়ার্দীসহ অনেক হাসপাতালে রয়েছে।

এদিকে, হাসপাতালটির নতুন ভবনের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। তবে দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই কে ডেঙ্গু রোগী। এসব এলাকায় বারান্দায় রোগীর চাপ অতিরিক্ত। এক রোগীর বাবা জানান, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা থেকে ডেঙ্গু সন্দেহে স্থানীয় হাসপাতালে দেখিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে কয়দিনে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।

মঙ্গলবার বিকালে ডিউটিরত সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসিমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মশার জন্য কোনও ওষুধ দেওয়া হয় কিনা? তিনি বলেন, আমি তো এখানে তিন মাস ধরে আছি, দেখি নাই। সাপ্লাই আছে কিনা তাও জানা নেই।

ঢামেকে মেডিসিন বিভাগের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই ডেঙ্গু রোগী আছে কিনা। কর্তৃপক্ষ মশারি দিলেও টানান না কেউই।

কীভাবে চেনা যাবে কে ডেঙ্গু রোগী প্রশ্নে পাশের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তির ফাইলে লেখা আছে ডেঙ্গু রোগী। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রয়েছে মশারি। আমরা প্রতিটি রোগীকেই মশারি দেই। কিন্তু তারা নেন না। জোর করে দিতে গেলে কেউ কেউ নেন। তবে ব্যবহার করেন না।

ওষুধ ছিটাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ওয়ার্ডগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন  রাখা হয়। এখানে যে মশা জন্ম নেয় না, একেবারে তা নয়। যেসব মশা জন্ম নেয়, তা  হাসপাতালের আশপাশে ময়লা আবর্জনা থেকে জন্ম নেয়। তবে তা এডিস মশা নয়। আমরা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি মেডিক্যালের আশপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফুটপাত উচ্ছেদসহ মশা নিধনের জন্য ওষুধ ছিটাতে।