‘পারস্পরিক সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে’

পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি ও ইউনিসেফ।

রবিবার (৫ মার্চ) আইসিডিডিআরবি এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে ‘জরুরি স্বাস্থ্যসেবা (তীব্র পানির মতো ডায়রিয়ার জন্য প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান) ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের ক্যাম্পে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে কলেরা নজরদারি’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম ও ফল তুলে ধরতে একটি সেমিনারের আয়োজন করে। কক্সবাজারের লং বিচ হোটেলে অনুষ্ঠিত সেই সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে  সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী এবং এনজিওসহ প্রকল্পের বিভিন্ন সহযোগীরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের কো-প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর এবং আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।এছাড়া তিনি ২০১৭ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আইসিডিডিআরবি ও ইউনিসেফের যৌথ পরিচালনায় একটি মাঠ পর্যায়ের মূল্যায়ন সম্পর্কে অবহিত করেন।

প্রকল্পটির আওতায়, রোগের নজরদারি, চিকিৎসা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টিকাদানের মাধ্যমে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে দুই হাজার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। টেকনাফে পাঁচটি ডায়রিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র (ডিটিসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা সেপ্টেম্বর ২০১৯-এর ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে। লেদা ডায়রিয়া চিকিৎসা কেন্দ্রের কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে এবং এখানে প্রতি বছর প্রায় ৩,৫০০ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও, কেন্দ্রটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে চলমান যৌথ মূল্যায়ন দলেও অংশ নিচ্ছে।

আইসিডিডিআরবি’র নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. এএসজি ফারুক ডায়রিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র-ভিত্তিক নজরদারির ফল উপস্থাপন করেন এবং জানান  রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে (বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা) ও কৃশকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন) এবং ওজন স্বল্পতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্লোরিনযুক্ত ট্যাপের পানির ব্যবহার, টয়লেট ব্যবহার, খাবার স্যালাইন এবং টিকা গ্রহণের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আইসিডিডিআরবি’র  ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফেরদৌসী কাদরী কক্সবাজারে মুখে খাওয়ার কলেরা টিকাদান কার্যক্রমের সাফল্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সাত দফা টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে, কোনও কোনও ক্যাম্পে মানুষকে শতভাগ টিকাদান করা হয়েছে। প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা জনগণ ৩৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৯ ডোজ টিকা পেয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি বসবাসকারী ৫ লাখ ২৮ হাজার ২৯৭ স্থানীয় জনগণ ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৮ ডোজ মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা পেয়েছে। এরকম জটিল পরিবেশেও টিকাটি ভালোভাবে গৃহীত হয়েছে।